তারাবির নামাজ না পড়লে রোজা হবে কি - তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম

যেসব কারণে রোজা ভেঙ্গে যায় - যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় নাপবিত্র মাহে রমজান মাস মুসলমানদের জন্য একটি ইবাদতের মাস। আর এর মধ্যে বিশেষ একটি ইবাদত হল তারাবির নামাজ। তারাবির নামাজ রমজান মাসে প্রতিদিন এশার ফরজ ও সুন্নত নামাজের পর আদায় করা হয়। তারাবির নামাজ ওয়াজিব বা ফরজ নয়। তারাবির নামাজ হলো সুন্নতের মুয়াক্কাদা। রমজান মাসে এটি একটি বিশেষ ইবাদত। রমজান মাসে প্রতিটি রোজাদার ব্যক্তির কর্তব্য হলো তারাবির নামাজ আদায় করা।

তাই আপনারা যারা তারাবির নামাজ না পড়লে রোজা হবে কি এবং তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান তাদের জন্যই আজকের এই পোস্ট। চলুন তাহলে আর বেশি দেরি না করে তারাবির নামাজ না পড়লে রোজা হবে কি এবং তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। আপনারা যারা এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে চান তারা অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

সূচিপত্র: তারাবির নামাজ না পড়লে রোজা হবে কি - তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম

ভূমিকা

পবিত্র মাহে রমজান মানেই ইবাদতের মাস। তবে পবিত্র মাহে রমজানে বিশেষ একটি ইবাদত হল তারাবির নামাজ। আর এই তারাবির নামাজের অনেক ফজিলত রয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (সা:) বলেছেন যে ব্যক্তি সোয়াবের উদ্দেশ্যে রমজান মাসে তারাবির নামাজ আদায় করবে তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। তাই একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের অবশ্যই তারাবির নামাজ পড়তে হবে। মহান আল্লাহতালা যেমন মুসলমানদের ওপর রোজা ফরজ করে দিয়েছে ঠিক তেমনি হযরত মুহাম্মদ (সা:) মুসলমানদের ওপর তারাবির নামাজ সুন্নত করে দিয়েছে। তাই আমাদের অতীতের সকল গুনাহ মাফ করার জন্য রমজান মাসে সোয়াবের উদ্দেশে অবশ্যই তারাবির নামাজ আদায় করতে হবে। চলুন তাহলে আর বেশি দেরি না করে আজকের আলোচনা শুরু করা যাক।

তারাবির নামাজ না পড়লে রোজা হবে কি 

পবিত্র রমজান মাস ইবাদতের মাস। আল্লাহতালা রমজান মাসে রোজা আমাদের জন্য ফরজ করে দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, হে ঈমানদাররা আমি তোমাদের উপর রোজা ফরজ করেছি।  কারণ যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। (সূরা বাকারা আয়াত ১৮৩)

পবিত্র রমজানে রোজা রাখার পাশাপাশি আমাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো তারাবির নামাজ। রমজান মাসে এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ এবং দুই রাকাত সুন্নত নামাজের পর বেতের আগে দুই রাকাত করে 10 সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয় সেটাকে তারাবির নামাজ বলা হয়। তারাবির নামাজ পড়া সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ একবার খতম করা। (সুন্নতে মুয়াক্কাদা)

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে তারাবির নামাজ না পড়লে রোজা হবে কি, মূলত এই বিষয়ে অনেক মতবিরোধ রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে নামাজ না পড়লে রোজা হবে না। আসলে এটা সঠিক নয়। তারাবির নামাজ যদি কোন কারণে কেউ পড়তে না পারে তাহলে অনেকেই মনে করেন যেহেতু তারাবির নামাজ পড়তে পারলাম না তাহলে রোজা থেকে কোন লাভ নেই। এই বিষয়টি ভাবা সঠিক নয়। কেননা তারাবির নামাজ হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা যা পালনে কোন বাধ্যতা নেই। কিন্তু রোজা রাখা বাধ্যতামূলক। রোজা রাখা ফরজ তাই একজন মুসলমান হিসাবে আমাদেরকে অবশ্যই রোজা করতে হবে।

তারাবির নামাজ রাসুল (সা:) পড়তেন এবং তার ধারাবাহিকতা থেকে মুসলমানরা এই নামাজ পড়ে আসেন। হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) থেকে এ পর্যন্ত ২০ রাকাত তারাবির নামাজ জামাতের সাথে পড়ে আছেন। বাংলাদেশের সকল মসজিদে ২০ রাকাত করে তারাবির নামাজ পড়া হয়। কেউ যদি তারাবির নামাজ পড়তে না পারার জন্য পরবর্তী সময়ে সে রোজা না রাখে তাহলে সেই ব্যক্তি অনেক বড় ভুল করবে। কেননা তারাবির নামাজ পড়া সুন্নত আর রোজা হল ফরজ। তাই ফরজ আমাদেরকে অবশ্যই পালন করতে হবে। তাই রোজার সাথে তারাবির কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু একজন রোজাদার ব্যক্তির উচিত তারাবির নামাজ পড়া তাতে করে অধিক সওয়াব পাওয়া যায়।

রমজান মাসেই পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছিল। আর তাই এই মাসে তারাবির নামাজের মধ্য দিয়ে পবিত্র কোরআন খতম দেওয়া হয়ে থাকে। যদি কোন ব্যক্তি পবিত্র রমজান মাসে পুরো মাস ধারাবাহিকভাবে তারাবির নামাজ পড়ে তাহলে সেই ব্যক্তি পবিত্র কোরআন খতম দেওয়ার সওয়াব পাবে। কিন্তু কেউ যদি কোন কারণে তারাবির নামাজ পড়তে না পারেন তাহলে কোন সমস্যা নেই। কারণ রোজার সাথে তারাবির নামাজ পড়ার কোন সম্পর্ক নেই। সুতরাং তারাবির নামাজ না পড়লেও আপনার রোজা হয়ে যাবে।

তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম

বাংলাদেশে তারাবির নামাজের দুইটি পদ্ধতি দেখা যায়। একটি হল খতম তারাবি আর অন্যটি হলো সূরা তারাবি। পবিত্র কুরআন সম্পূর্ণ তেলাওয়াত করাকে খতম তারাবি বলে। আর সূরা তারাবি যে কোন সূরা বা অন্য আয়াতের মাধ্যমে তারাবির নামাজ আদায় করা হয়। পবিত্র মাহে রমজানে তারাবির নামাজ পড়ার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। তাই একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্যই এই নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। তারাবির নামাজ পড়ার আগে প্রথমে নিয়ত করতে হয়। চার রাকাত পর পর তারাবির নামাজের নির্দিষ্ট কিছু দোয়া রয়েছে। আর আপনি সেই দোয়াগুলো মুখস্ত করে তারাবির নামাজ চার রাকাত পর পর পড়বেন।

আরও পড়ুন: নামাজ আদায় করার সঠিক নিয়ম - নামাজের রাকাত ও ফরজ কয়টি

পবিত্র রমজান মাসে এশার চার রাকাত ফরজ নামাজ এবং দুই রাকাত সুন্নত নামাজের পর তারাবির নামাজের জন্য নিয়ত করতে হবে। নিয়ত করার পর আপনাকে সানা পড়তে হবে। তারপর সূরা ফাতিহা পাঠ করে আরেকটি সূরা পাঠ করতে হবে। আর এভাবেই আপনি দুই রাকাত নামাজ আদায় করে সালাম ফিরাবেন। তারপর চার রাকাতে দোয়া-দরুদ পাঠ করে আপনাকে মোনাজাত করতে হবে। এভাবে দুই রাকাত করে ১০ সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে। তারপর দোয়া-দুরুদ ও মোনাজাতের মাধ্যমে আপনাকে তারাবির নামাজ সম্পূর্ণ শেষ করতে হবে। তারাবির নামাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়ে গেলে তখন আপনাকে বিতর নামাজ পড়তে হবে। 

তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল

আমরা অনেকেই ভাবি যে তারাবির নামাজ আসলে সুন্নত আবার অনেকেই ভাবি তারাবির নামাজ নফল। আসলে তারাবির নামাজ না সুন্নত আর না নফল, তারাবির নামাজ হল সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। সাধারণত সুন্নতে মুয়াক্কাদা ওয়াজিবের মতই। ওয়াজিবের জন্য যেমন জবাবদিহি করতে হবে। ঠিক তেমনি সুন্নতে মুয়াক্কাদার জন্যও জবাবদিহি করতে হবে। তবে ওয়াজিব নামাজের ক্ষেত্রে ওয়াজিব নামাজ পালন না করলেও নির্দিষ্ট কোনো শাস্তি পেতে হয় না। তবে সুন্নতে মুয়াক্কাদার ক্ষেত্রে শাস্তি পেতে হবে। তাই পবিত্র রমজান মাসে আমাদের সকলের উচিত রোজা রাখার পাশাপাশি তারাবির নামাজ পড়া। তারাবির নামাজ নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই সুন্নতে মুয়াক্কাদা।

তারাবির নামাজের ফজিলত হাদিস

ইসলাম ধর্মের অন্যতম প্রধান ইবাদতের নাম হচ্ছে নামাজ ও রোজা। ধনী হোক বা গরিব আল্লাহতালা সবার জন্য নামাজ ও রোজা পালন করা ফরজ করে দিয়েছে। পবিত্র রমজান মাসে সারাদিন সিয়াম সাধনা ও সালাত আদায়ের পর ইফতার এর  এশার নামাজের পর যখন তারাবির সময় হয়। সেই সময় কিন্তু আমাদের সকলের জন্য তারাবির নামাজ পড়া সুন্নত। মহান আল্লাহ তায়ালা রোজা রাখাকে যেমন ফরজ করেছে। ঠিক তেমনি প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) তারাবির নামাজ মুমিনদের ওপর সুন্নত করেছে।

যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানে দিনে রোজা রাখে এবং রাতে তারাবির নামাজ আদায় করে সেই ব্যক্তি অতীতের গুনাহ থেকে মুক্তি পাবে। মূলত ইবাদত পালন করতে হয় সুন্নতে পদ্ধতি অনুসারে। রমজানের চাঁদ দেখা গেলে রোজার আগ থেকেই তারাবির নামাজ আদায় করা রমজানের সুন্নত। হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বর্ণনা করেছেন রাসুল (সাঃ) বলেছেন,, পবিত্র রমজান মাসে যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের উদ্দেশ্যে তারাবির নামাজ আদায় করবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারি হাদিস: ৩৬)

তারাবির নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে

রমজান মাস মানেই ইবাদতের মাস। এই মাসে রোজা রেখে যত ইবাদত বন্দেগী করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবেন আল্লাহ আপনার সকল গুনাহ মাফ করে দেবে। এবং আল্লাহ তাআলা আপনার প্রতি খুশি হবে। রমজান মাসে রাসূল (সা:) তারাবির নামাজ শিক্ষা দিয়ে গেছেন। তারাবির নামাজ হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা। অনেকেই রয়েছে যারা রোজা রেখে শুধুমাত্র এশার নামাজ পড়ে চলে যায়। তারা মনে করে তারাবির নামাজ না পড়লেও কোন সমস্যা নেই। তবে আপনি তারাবির নামাজ ছাড়তে পারেন যদি আপনার কোন সমস্যা থাকে। আর যদি আপনি কোন সমস্যা ছাড়াই তারাবির নামাজ লাগাতার ছেড়ে দেন। তাহলে এটি কবিরা গুনাহর মধ্যে শামিল। (রুদ্দুল মুহতার ২/২৯৫) 

তারাবির নামাজ জামাতে পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। কোন ব্যক্তি যদি তারাবির নামাজ কয়েক রাকাত হয়ে যাওয়ার পর সে তারাবির নামাজ ধরে তাহলে তাকে বাকি তারাবির নামাজ পড়ে ইমামের সাথে বেতের নামাজ পড়ে নিতে হবে। তারপর ওই ব্যক্তিকে অবশিষ্ট তারাবির নামাজ আদায় করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেদেরকে হাফেজ না হওয়া সত্বেও তাদেরকে ইমাম বানানো হয়। একদমই ঠিক নয়।

আরও পড়ুন: নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ- যে কারণে নামাজ ভঙ্গ হয়

যে তারাবির নামাজ পড়ায় অথবা পড়াবে তার নিকট থেকে আয়ত্তের অর্থ জেনে নেওয়া উচিত। যখন থেকে সাহাবীরা এটি পড়া শুরু করেছে। তখন থেকেই তারা দুই সালামের পর পর অর্থাৎ চার রাকাত নামাজের পর সাহাবীরা বিশ্রাম নিতেন। তাই এই নামাজের নাম তারাবির নামাজ হয়েছে। সুতরাং কোন কারণ ছাড়া যদি তারাবির নামাজ লাগাতার ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে সেটা কবিরা গুনার মধ্যে শামিল। কোন ব্যক্তি যদি কোন রকম কারণ ছাড়া তারাবির নামাজ না পড়েন তাহলে সুন্নতে মুয়াক্কাদা তরক গুনাহ হবে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আশা আজকের এই পোষ্টটি পড়ে আপনি নিশ্চয়ই তারাবির নামাজ না পড়লে রোজা হবে কি এবং তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম এই বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এছাড়াও আজকের এই পোস্টে আমরা তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল, তারাবির নামাজের ফজিলত হাদিস, তারাবির নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে, ইত্যাদি এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আরো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা করছি আজকের এই আর্টিকেলটি পরে আপনি অনেক উপকৃত হবেন। আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লাগলো সেই মূল্যবান মতামতটি আমাদের কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন।

এছাড়াও এ ধরনের ইসলামিক তথ্যমূলক আর্টিকেল সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। এতক্ষণ সময় দিয়ে আজকের পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। আজকের আর্টিকেল এই পর্যন্তই আবার কথা হবে অন্য কোন টপিক নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শাকিল বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url