যেসব কারণে রোজা ভেঙ্গে যায় - যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না

নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ- যে কারণে নামাজ ভঙ্গ হয়পবিত্র মাহে রমজানে প্রতিটি মুসলমান রোজা রাখে। কারণ আল্লাহ তাআলা এই পবিত্র রমজান মাসে মুমিনদের ওপর রোজা ফরজ হিসেবে নির্ধারিত করেছেন। তাই সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। আপনাদের মধ্যে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে কি কি কারণে রোজা ভেঙে যায় এবং কি কি কারণে রোজা ভাঙ্গে না। তাই আজকে আপনাদের সুবিধার্থে আমরা যেসব কারণে রোজা ভেঙে যায় এবং যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করতে চলেছি।

চলুন তাহলে আর বেশি দেরি না করে যেসব কারণে রোজা ভেঙে যায় এবং যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না সেসব বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক। একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের অবশ্যই এই বিষয়গুলি সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। আপনারা যারা এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে চান তারা অবশ্যই সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

সূচিপত্র: যেসব কারণে রোজা ভেঙ্গে যায় - যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না

ভূমিকা

প্রতিবছর টানা একমাস সারা বিশ্বে পালিত হয় পবিত্র মাহে রমজান। আমাদের ইসলাম ধর্ম মতে রোজা রাখা মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরজ বিধান। ইসলামিক শরীয়াতে সিয়ামের শুদ্ধতা ও যথাযথ জন্য রোজা রাখার নির্ধারিত কিছু বিধি-বিধান রয়েছে। আর এর মধ্যে যদি তার কোন ব্যতিক্রম ঘটে তাহলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। নয়তো রোজা মাকরুহ হয়ে যায়। মহান আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি মুমিন বান্দার ওপর রোজা ফরজ করে দিয়েছে। 

রমজান মাসে যে ব্যক্তি রোজা রাখবে না অথবা যে ব্যক্তি রোজা রেখে ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গ করবে তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা কঠিন হবে। তাই আমাদের একজন মুসলমান হিসেবে অবশ্যই জেনে রাখা উচিত যে কি কি কারনে রোজা ভেঙে যায় এবং কি কি কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না। চলুন তাহলে আর বেশি দেরি না করে আজকের মূল আলোচনা শুরু করা যাক।

যেসব কারণে রোজা ভেঙ্গে যায়

একজন সুস্থ সবল মুমিনের জন্য রোজা রাখা অবশ্যক। মানুষ সারাদিন না খেয়ে রোজা করে, তারপরেও এর কিছু কারণ রয়েছে যে কারণে আপনার রোজা ভঙ্গ হয়ে যেতে পারে। আর সেই কারণগুলো মানুষের বদ অভ্যাসের কারণে হতে পারে, অথবা অসতর্কতার জন্য হতে পারে। তাই আপনাদের সুবিধার্থে আমরা আজকে যেসব কারণে রোজা ভেঙে যায় সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করব। প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তির জন্য এই বিষয়টি জানা অত্যন্ত প্রয়োজন। আসুন তাহলে জেনে নেই যে কি কি কারণে রোজা ভেঙে যায়।

আরও পড়ুন:  নামাজ আদায় করার সঠিক নিয়ম - নামাজের রাকাত ও ফরজ কয়টি

  • রোজা থাকা অবস্থায় যদি বৃষ্টির পানি মুখে পড়ে তা যদি গিলে ফেলা হয় তাহলে রোজা ভেঙ্গে হয়ে যাবে।
  • আপনি যদি রোজা থাকা অবস্থায় ইচ্ছা করে বমি করেন তাহলে আপনার রোজা ভেঙে যাবে।
  • রোজা থাকা অবস্থায় যদি মুখে অল্প বমি আসে তাহলে সেটা যদি গিলে ফেলা হয় তাহলেও রোজা ভেঙে যায়।
  • ইফতারের সময় হয়েছে ভেবে সূর্যাস্তের আগে যদি আপনি ইফতার করে ফেলেন তাহলে আপনার রোজা ভেঙে যাবে।
  • রোজা থাকা অবস্থায় ওযু করতে গিয়ে কুলি করতে গিয়ে বা মুখে পানি দেওয়ার সময় যদি পানি ভেতরে চলে যায় তাহলে আপনার রোজা ভেঙে যাবে।
  • হস্তমৈথুন করলে রোজা ভেঙে যায়।
  • আপনি যদি রাত ভেবে সুবাহে সাদিকের পর সেহরি খান তাহলে আপনার রোজা হবে না।
  • সহবাস করলে রোজা ভেঙে যায়।
  • রোজা থাকা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে কোন খাবার খেলে রোজা ভেঙ্গে যায়।
  •  রোজা থেকে বিড়ি অথবা সিগারেট খেলে রোজা ভেঙে যায়।
  • এছাড়াও রোজাদার ব্যক্তিকে যদি জোর করে কোন কিছু খাওয়ানো হয় তাহলেও তার রোজা ভেঙে যাবে।

যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না

অনেকেরই মধ্যে রোজা ভঙ্গের বেশ কিছু ভুল ধারণা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়ে থাকে। কিন্তু এই কারণগুলোতে আসলে কিন্তু রোজা ভাঙ্গে না। এমন কিছু কারণ রয়েছে যেগুলোর কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না। আসুন তাহলে আজকে জেনে নেই যে কি কি কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না।

  • আপনি যদি ভুলবশত কোন কিছু খেয়ে ফেলেন তাহলে আপনার রোজা ভঙ্গ হবে না।
  • আপনি যদি ভুলবশত রোজা থাকা অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাস করেন তাহলে আপনার রোজা ভঙ্গ হবে না।
  • নিদ্রায় থাকা অবস্থায় যদি স্বপ্নদোষ হয় তাহলে আপনার রোজা ভঙ্গ হবে না।
  • রোজা থাকা অবস্থায় সুরমা ব্যবহার করলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
  • অনিচ্ছাকৃতভাবে যদি আপনার বমি হয় তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
  • মুখে থুতু আসলে সেটা গিলে খেয়ে ফেললে রোজা ভঙ্গ হবে না।
  • অসুস্থ থাকা অবস্থায় যদি ইনজেকশন নেওয়া হয় তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
  • রোজা থাকা অবস্থায় যদি কোন পোকামাকড় কামড় দেয় তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
  • তেল ব্যবহার করলে রোজা ভঙ্গ হয় না।
  • রোজা থাকা অবস্থায় যদি রক্ত বের হয় তাহলে আপনার রোজা ভঙ্গ হবে না।
  • ভুলবশত কোন কিছু যদি পান করে ফেলেন তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
  • গরমে রোজা থাকা অবস্থায় আপনি যদি বারবার গোসল কিংবা কুলি করেন তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
  • এছাড়াও অনিচ্ছাকৃত ভাবে যদি গলার মধ্যে অখাদ্য বস্তু চলে যায় তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না।যেমন: ধুলাবালি, ধোঁয়া, মশা, মাছি, ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধ ইত্যাদি।

নফল রোজা ভঙ্গের কারণ

মূলত নফল রোজা ও ফরজ রোজা একই কারণে ভঙ্গ হয়। আমরা ইতিমধ্যে রোজা ভঙ্গের কারণগুলি আপনাদের জানিয়েছি। নফল রোজা হোক বা ফরজ রোজা আপনার রোজা ভঙ্গ হবে তখনই যখন উপরের অংশে উল্লেখিত কারণ গুলোর সাথে ঘটবে। এছাড়াও উপরে অংশে আমরা আলোচনা করেছি যে কি কি কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না আর এই কারণগুলো যদি আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে করে থাকেন তাহলে আপনার রোজা ভেঙ্গে যাবে। তো আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে রমজান মাসে যেসব কারণে ফরজ রোজা ভঙ্গ হয় ঠিক সে কারণগুলির জন্য নফল রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। আশা করি এই অংশটি পড়ে আপনি বুঝতে পেরেছেন যে নফল রোজা ভঙ্গের কারণ গুলো কি। 

বমি করলে কি রোজা ভেঙে যায়

পবিত্র মাহে রমজানে প্রতিটি মুসলমান রোজা থাকে। তবে কিছু কিছু কারণ রয়েছে যেগুলোর জন্য রোজা ভেঙে যায় তার মধ্যে একটি কারণ হলো বমি। আপনারা অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন যে বমি করলে কি রোজা ভেঙে যায় মূলত এই প্রশ্নটির উত্তর হচ্ছে। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে তাহলে তার রোজা ভেঙ্গে যাবে। তবে অনিচ্ছাকৃতভাবে যদি কেউ বমি করে ফেলে এবং সে যদি বমি খেয়ে না ফেলে তাহলে তার রোজা ভঙ্গ হবে না।

সফর অবস্থায় কি রোজা ভাঙ্গার অনুমতি আছে

আপনারা যারা প্রশ্ন করে থাকেন যে সফর অবস্থায় কি রোজা ভাঙ্গার অনুমতি আছে তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে মূলত ইসলামিক শরীয়ত অনুযায়ী সফরে রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে। তবে আপনাকে এই রোজার কাজটি পরবর্তীতে আদায় করতে হবে। তবে পরবর্তীতে যদি আপনি এই রোজার কাজটি সম্পন্ন করেন তাহলে রমজানের বরকত পাওয়া যায় না। 

আরও পড়ুন: বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায় | বদ নজর থেকে বাঁচার দোয়া

আর এই মাসালাটি অনেকেই আবার এইভাবে বলে থাকে,,, যে সফরের হালাতে রোজা ভাঙ্গা জায়েজ রয়েছে। তবে এভাবে বলা ঠিক নয়। কেননা এতে করে ধারণা করা হয় যে সফর অবস্থায় রোজা শুরু করার পরেও তা শেষ করে ফেলা জায়েজ। কিংবা সফরে রোজা শুরু করার পরেও ভাঙ্গা যায়, অথচ এটি কিন্তু ঠিক নয়। মূলত রোজা শুরু করার পর তা যদি ভাঙ্গা হয় তাহলে সেটা জায়েজ নয়।

ভুলে সূর্যাস্তের আগে খেয়ে ফেললে রোজা হবে কি

ভুলে সূর্যাস্তের আগে খেয়ে ফেললে রোজা হবে কিনা এই প্রশ্নটা অনেকেই করে থাকেন মূলত এই প্রশ্নটির উত্তর হল। ইসলামের দৃষ্টিতে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজার নিয়াতে খাওয়া-দাওয়া ও সহবাস থেকে বিরত থাকতে বলেছে। আর এই নিয়ম অনুযায়ী যদি সূর্যাস্তের এক মিনিট আগেও আপনি খাওয়া দাওয়া করেন তাহলে কিন্তু আপনার রোজা ভেঙ্গে যাবে। 

তবে কেউ যদি সূর্যাস্তের এক থেকে দুই ঘন্টা আগে মনে করে যে সূর্যাস্ত হয়ে গেছে এবং পরে জানতে পারে আসলেই এখন সূর্যাস্ত হয়নি তাহলে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়া থেকে সেই ব্যক্তিকে বিরত থাকতে হবে। অর্থাৎ তাকে পুনরায় আবার রোজার কাজ পালন করতে হবে। তবে কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে জেনে শুনে সূর্যাস্তের আগে খাওয়া-দাওয়া করে ফেলে তাহলে সেই ব্যক্তিকে পরবর্তী সময়ে আবার রোজা রাখতে হবে। এছাড়াও ওই ব্যক্তিকে আবার কাফফারা দিতে হবে। 

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আশা করি আপনি আজকের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি নিশ্চয়ই যেসব কারণে রোজা ভেঙে যায় এবং যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না এই বিষয়গুলি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এছাড়াও আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা নফল রোজা ভঙ্গের কারণ, বমি করলে কি রোজা ভেঙে যায়, সফর অবস্থায় কি রোজা ভঙ্গের অনুমতি আছে, ভুলে সূর্যাস্তের আগে খেয়ে ফেললে রোজা হবে কি ইত্যাদি এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আরো আলোচনা করেছি। আশা করি আপনারা এই বিষয়গুলি সম্পর্কে অবগত হয়েছেন।

    আরও পড়ুন:  হজে যাওয়ার আগে যেভাবে প্রস্তুতি নেবেন - হজে যাওয়ার আগে যে কাজগুলো করা যাবে না

    যেসব কারণে রোজা ভেঙ্গে যায় - যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না---আজকের এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন। আশা করি এ ধরনের ইসলামিক তথ্য আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। তাই এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্যমূলক পোস্ট বেশি বেশি জানতে ও পড়তে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি ফলো করুন। এতক্ষণ সময় দিয়ে পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    শাকিল বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url