জাফরান খাওয়ার ১০ উপকারিতা | রূপচর্চায় জাফরানের ব্যবহার

কিসমিসের ৩০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা - কিসমিস খাওয়ার নিয়মআমরা সবাই কিন্তু স্যাফরম/জাফরান সম্পর্কে শুনেছি। আবার এটা আমরা অনেকেই ব্যবহারও করেছি। কিন্তু এটি খুবই ব্যয়বহুল সবার পক্ষে এটা ব্যবহার করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। কিন্তু অল্প পরিমাণ জাফরান ব্যবহার করলেই এর উপকারিতা পাওয়া যায়। তাই সেই দিক চিন্তা করলে এটি অনেকটাই সাশ্রয়ী। জাফরান একটি মসলা জাতীয় উদ্ভিদ যা কিনা বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান মসলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। জাফরান মূলত ক্রোকাস নামে পরিচিত। জাফরান মূলত খাবারের মধ্যে বিশেষ করে বিরিয়ানি ও প্রসাধনীতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে জাফরানের বিশেষ গুণ রয়েছে। তাই আপনাদের সুবিধার্থে আজকে আমরা জাফরান খাবার উপকারিতা এবং রূপচর্চায় জাফরানের ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করব।

চলুন তাহলে আর বেশি দেরি না করে জাফরান খাওয়ার উপকারিতা এবং রূপচর্চায় জাফরানের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক। আপনারা যারা এই বিষয় সম্পর্কে জানতে চান তারা অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

সূচিপত্র: জাফরান খাওয়ার ১০ উপকারিতা | রূপচর্চায় জাফরানের ব্যবহার

ভূমিকা

জাফরান একটি মসলা জাতীয় উদ্ভিদ। এটি বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান মসলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। জাফরান মূলত খাবারের মধ্য বিশেষ করে বিরিয়ানি ও প্রসাধানিতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও জাফরানের বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে বিশেষ গুনাগুন রয়েছে। আপনারা জানলে অবাক হবেন যে জাফরান ফুল থেকে ফল হয় না। জাফরান বিশেষ পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। জাফরান ভারতের সবচেয়ে দামি অর্থকরী ফসল। কাশ্মীরের পাহাড়ি উপত্যকায় এই মূল্যবান ফসল হয়। জাফরানে রয়েছে অনেক উপকারী উপাদান যেমন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট স্যাফ্রানাল, ক্রোসিন, ক্রোসেটিন, কেইমফেরল এই উপাদানগুলো সাধারণত প্রদাহ প্রশমিত করে থাকে। আর এগুলো হলো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। 

আপনারা যারা জাফরান খাওয়ার উপকারিতা এবং জাফরানের নানা রকম গুণ সম্পর্কে জানতে চেয়ে আমাদের এই পোস্টটি ওপেন করেছেন। তারা সম্পূর্ণ সঠিক জায়গায় এসেছে। কারণ আজকে আমরা জাফরানের যত গুণ সম্পর্কে আলোচনা করব। এছাড়াও আজকের এই আর্টিকেলটি পরে আপনি জাফরান সম্পর্কে আরো নানা রকম তথ্য পাবেন। চলুন তাহলে বেশি দেরি না করে মূল আলোচনা গুলো শুরু করা যাক।

জাফরান খাওয়ার ১০ উপকারিতা

প্রাচীনকাল থেকেই জাফরানকে মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও জাফরান আয়ুর্বেদিক থেকে শুরু করে প্রায় সকল ধরনের চিকিৎসাতে ব্যবহার করা হয়। আরো জানা যায় যে  জাফরান মানবদেহের বিভিন্ন ধরনের রোগ সারাতে সক্ষম। জাফরানে বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ ও মিনারেল সহ প্রায় ১২০ ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। তাই আপনাদের সঙ্গে আজকে আমরা জাফরানের কিছু উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করতে চলেছি। নিচে জাফরানের উপকারিতা গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

আরও পড়ুন: ডালিম খাওয়ার ১০ উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ এটি মূলত শরীরে হঠাৎ করেই বাসা বাধে না। ক্যান্সার হওয়ার কিছু ভাইরাস রয়েছে যা শরীরে থাকলে একসময় তা মারাত্মক ক্যান্সারের সৃষ্টি করে। জাফরান বিশেষ করে প্রটেস্ট ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে: জাফরান দেহের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। জাফরনে রয়েছে পটাশিয়াম যা হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও হৃদপিন্ডের পেশির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার জন্য আপনি নিয়মিত জাফরান খেতে পারেন। কারণ জাফরান যেমন রক্ত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে ঠিক তেমনি এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে ব্লাড সার্কুলেশন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণ করে: অন্যান্য প্রাকৃতিক এমন অনেক উদ্ভিদ রয়েছে যেগুলো কোলেস্টরলের রক্তের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ঠিক জাফরানো তেমন রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষ করে এই জাফরান মসলা দেহের জন্য ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টরল দূর করতে সাহায্য করে। এবং রক্তে উপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

রক্তস্বল্পতা দূর করে: জাফরানে অনেক বেশি পরিমাণে আয়রন রয়েছে। আর এই খনিজ উপাদান মানবদেহের রক্ত পরিশুদ্ধ করে এবং রক্ত তৈরি হওয়া বৃদ্ধি করে। আর এতে করে দেহের রক্তস্বল্পতা দূর হয় এর পাশাপাশি রক্তের কারণে নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি হওয়া নিরসণ হয়।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে: জাফরান হরমোন উদীপ্ত করে এবং দেহের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে। যেহেতু এটি মস্তিষ্কের জন্য অনেক উপকারী তাই জাফরান স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে যাদের স্মৃতিশক্তি খুবই দুর্বল তারা জাফরান খেয়ে তাদের স্মৃতিশক্তি অনেকটাই বৃদ্ধি পায়।

রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে: জাফরানে সঠিক পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে যা শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে। জাফরানের কারণে ব্লাড সার্কুলেশন কোন ঝামেলা ছাড়াই সম্পন্ন হয়। এটি খাওয়ার ফলে দেহের মরা কোষ জীবিত হয়। এছাড়াও অন্যদিকে একমাত্র রক্ত চলাচল হয় এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

অবসাদ দূর করে: অবসাদ দূর করার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ এবং টোটকা ব্যবহার করে থাকি। তবে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়া তেমন কোন ভালো হওয়ার ফল পাওয়া যায় না। আর এর জন্য আপনি চাইলে নিয়মিত জাফরান খেতে পারেন। এটি মস্তিষ্কের নিউরন সচল করে যা মানসিক অবসাদ এবং দুশ্চিন্তা দূর করে।

অনিদ্রা দূর করে: অনিদ্রা আমাদের অনেকেরই স্বাভাবিক জীবন যাপনে বিঘ্ন ঘটায়। কারণ যখন ঘুম হয় না তখন দুশ্চিন্তা অন্তরে বাসা বাঁধে। আর এর কারনে শরীর এবং স্বাস্থ্য দুটোই খারাপ হতে থাকে। আর এই সমস্যাটি সমাধান করার জন্য আপনি চাইলে জাফরান খেতে পারেন। কারণ অনিদ্রার জন্য জাফরান অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

অ্যাসিডিটি দূর করে: এই জাফরান মসলা হজমের সমস্যা দূর করে। এবং এর পাশাপাশি অনাকাঙ্ক্ষিত গ্যাস দূর করতেও সাহায্য করে। এছাড়াও এটি খেলে এসিডিটি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।

স্বাস্থ্য উন্নত করে: নিয়মিত যদি জাফরান খাওয়া হয় তাহলে এটি হরমোন উদ্দীপক হিসাবে কাজ করবে, অর্থাৎ আপনার শরীর যদি রোগা হয়ে থাকে। এছাড়াও যদি সব সময় অসুখ লেগে থাকে তাহলে আপনি জাফরান সেবন করতে পারেন। এটি সেবনের মাধ্যমে আপনার স্বাস্থ্য উন্নত হবে। জাফরানে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান মানব দেহের সকল সমস্যার সমাধান করে। এর পাশাপাশি শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে।

রূপচর্চায় জাফরানের ব্যবহার

মূলত প্রাচীনকাল থেকে রানীরা এই জাফরান ব্যবহার করে আসেন রূপচর্চার জন্য। জাফরান ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি ব্রণের দাগ, রোদে পোড়া দাগ ইত্যাদি দূর করতে সক্ষম। আপনি একটু খেয়াল করলে দেখতে পাবেন। এখন যে কোন ভালো ব্র্যান্ডের ক্রিমেও জাফরানের নাম উল্লেখ রয়েছে। চলুন তাহলে জাফরানের কিছু ফেসপ্যাক সম্পর্কে জানা যাক।

জাফরান এবং চন্দনের প্যাক:

প্রথমে যা লাগবে ২ থেকে ৩ দানা জাফরান এবং ১ চা চামচ চন্দনের গুঁড়ো দুই টেবিল চামচ কাঁচা দুধ।

প্রথমে চন্দন এবং কাঁচা দুধ ও জাফরান ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট করে নিতে হবে। পেস্ট যেন ঘন হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এবার এই প্যাকটি মুখে ভালো করে মাসাজ করে লাগাতে হবে। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। আর এইভাবে এই প্যাকটি ২ থেকে ৩ সপ্তাহ ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন: গাছের ৫টি প্রয়োজনীয়তা- গাছ লাগানোর উপকারিতা

এই প্যাকটি সাধারণত তৈলাক্ত ত্বক এবং সেনসিটিভ ত্বকের জন্য অনেক বেশি কার্যকরী। সাধারণত এই প্যাকটি রোদে পড়া দাগ এবং ব্রনের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি ব্যবহার করলে ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল থাকবে। এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা থাকবে না।

জাফরান এবং কাঁচা দুধ:

প্রথমে যা লাগবে ৫ দানা জাফরান এবং ১/২ কাপ কাঁচা দুধ।

জাফরান এবং কাঁচা দুধ মিশিয়ে ২ থেকে ৩ ঘন্টা রাখতে হবে। তারপর এই প্যাকটি ভালো করে মুখে লাগাতে হবে। এরপর শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করতে হবে। এই প্যাকটি ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। এছাড়াও জাফরানে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা মুখের ব্রণ এবং ত্বকের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে।

জাফরান এবং মধুর প্যাক:

প্রথমে যা লাগবে ৪ থেকে ৫ দানা জাফরান এবং ২ থেকে ৩ টেবিল চামচ মধু।

জাফরান এবং মধু ভালো করে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে নিতে হবে। এবার এই প্যাকটি মুখে ভালো করে লাগাতে হবে। এটি লাগানোর পর ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। আর এ মধু ও জাফরানের প্যাকটি ত্বকের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করবে। ছাড়াও এর পাশাপাশি বলিরেখা পড়া থেকেও ত্বককে রক্ষা করে।

জাফরান দুধের উপকারিতা

দুধ ও জাফরান পুরুষদের যৌন ক্ষমতা বাড়াতে ভীষণভাবে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে সঙ্গে একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যা মেটাতেও খুব ভালো কাজ করে। এছাড়াও দুধ ও জাফরান পুরুষদের শুক্রাণুর পরিমাণ বাড়াতেও সাহায্য করে। দুধের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন বি2, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন কে, ভিটামিন ই ইত্যাদিসহ আরো রয়েছে আয়োডিন এবং অনেক খনিজ পদার্থ যা পুরুষের যৌন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

জাফরান খেলে কি ওজন কমে

জাফরান ওজন কমাতে খুবই কার্যকরী। জাফরান রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে। যদি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম থাকে তাহলে ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এর জন্য জাফরান ওজন কমাতে সহায়ক। এছাড়াও ডায়াবেটিসের রোগীরা যদি জাফরান খায় তাহলে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়বে।

জাফরান খাওয়ার নিয়ম

ভারতে যেভাবে জাফরান খাওয়া হয়, সেভাবে কিন্তু আপনি বাংলাদেশে জাফরান খেতে পারবেন না। জাফরান খাবার কিছু নিয়ম রয়েছে। চলুন তাহলে জাফরান খাওয়ার নিয়ম গুলি সম্পর্কে জানা যাক। জাফরান খাওয়ার সবচেয়ে উত্তম সময় হচ্ছে রাতে। আপনি রাতে ঘুমানোর আগে দুধের সাথে মিশিয়ে জাফরান পান করুন। তবে অবশ্যই আপনাকে অরজিনাল জাফরান পান করতে হবে। ১ কাপ খাটি গরুর দুধ দিয়ে আপনাকে অবশ্যই জাফরান পান করতে হবে। তবে গুঁড়ো দুধ একদমই খাওয়া যাবে না। আপনি যদি জাফরান খেতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই ১ চিমটি জাফরান, ১ চামচ কিসমিস বাটা অথবা আস্ত কিসমিস এবং ১ চামচ অর্গানিক বা খাঁটি মধু মিশিয়ে জাফরান খেতে হবে।

সবার আগে ভালোভাবে দুধ ফুটিয়ে নিন। ফুটানো দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে ২ থেকে ৩ মিনিট ফুটিয়ে চুলাবন্ধ করে দিন। এবার বাটা বা আস্তো কিসমিস দিয়ে দিন। এরপর ঢাকনা দিয়ে ৫ মিনিট রেখে দিন। এবার আপনি কুসুম কুসুম গরম দুধের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। তবে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যেন দুধ ঠান্ডা না হয়ে যায়। আপনাকে দুধ ঠান্ডা হওয়ার আগে জাফরান পান করতে হবে। আর এটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।

জাফরান তৈরির নিয়ম

জাফরান চাষের প্রথম বছরে কিন্তু এটিতে ফুল ধরে না। বরং দ্বিতীয় বছর থেকে এটিতে ফুল ২ থেকে ৪ টি ফুল আসে। ২ বছরের জাফরানের গাছে ৩ থেকে ৪টি ফুল ধরে। এবং ৩ থেকে ৪বছরের গাছে ৫ থেকে ৮টি ফুল আসতে পারে। জাফরান গাছে ৩ টি স্ত্রী অঙ্গ থাকে এবং পুরুষও অঙ্গ থাকে ৩টি। আর জাফরান গাছে অক্টোবর থেকে ফুল ধরা শুরু করে। এছাড়া অনেক সময় জাফরান গাছের ফুল ধরা তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে। আপনার হয়তো জানেন যে জাফরানের ফুল থেকে ফল হয় না।

জাফরান তৈরি করার নিয়ম হলো, গাছ হতে ফুলগুলো সংরক্ষণ করুন। মূলত ফুল ফোটার সাথে সাথে আপনাকে ফুলের গর্ভদন্ডের প্রয়োজনীয় অংশ কেচি দিয়ে কেটে চওড়া পাত্রে এবং পরিষ্কার কাগজ বিছিয়ে জাফরান শুকাতে দিতে হবে। এরপর ভালোভাবে রোদে শুকাতে হবে। আপনি খেয়াল রাখবেন যে জাফরান রোদে শুকানোর সময় কোন রকম প্রাণী জাফরানের উপর দিয়ে যেন হাঁটাচলা না করে। এছাড়া আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যেন জাফরান বাতাসে উড়ে না যায়।

আরও পড়ুন: সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে মিলবে যে ১০ উপকার 

এছাড়াও বাজারে এক ধরনের ডেসিকেটর পাওয়া যায় যা দিয়ে আপনি জাফরানের ফুল শুকাতে পারবেন। আর এতে কোন ঝামেলা নেই। এই পদ্ধতিটি অনেকটাই চায়ের মত। জাফরান ২ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত রোদে শুকানোর পর আদ্রতা রোধক পাত্রে জাফরান সংরক্ষণ করতে হবে। এই কাজটি মূলত ধৈর্যের কাজ। তবে এটি করতে পারলে আপনি  প্রচুর পরিমাণ ইনকাম করতে পারবেন। ১ গ্রাম বা 0.035 আউন্স জাফরানের জন্য ১৫০ টি ফুলের প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ এক কেজি পরিমাণ জাফরানের জন্য এক থেকে ২ লাখ ফুলের প্রয়োজন হয়। আর এর দাম বেশি হওয়ার কারণে মূলত এটি পুরোটাই শ্রম থেকে আসে। আপনি চাইলে মেশিন দিয়ে কিছু করতে পারবেন না এটি শুধু পরিচর্যার কাজ।

আসল জাফরান চেনার উপায়

বর্তমানে বাজারে এখন নকল জাফরানের ছড়াসরি, এই নকলের ভেতর আসল পণ্য খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল। জাফরানের প্রচুর দাম ও চাহিদার কারণে এখন অসৎ ব্যবসায়ীরা এর সুযোগ নিচ্ছে। আসল জাফরানের বদলে নকল জাফরান বিক্রি করছে। আসল জাফরান চেনার উপায় হচ্ছে একটি কাঠি বা শালাকার উপর একটি পুংকেশর থাকবে যা দেখতে অনেকটাই ম্যাচের কাঠির মত। আর এটাই মূলত আসল জাফরান চেনার উপায়। 

তাই জাফরানের মত যে কোন পণ্য বা খাবার কেনার আগে অবশ্যই যাচাই করে আসল পণ্য কিনবেন। আমাদেরকে অবশ্যই আসল জাফরান চেনার উপায় জেনে রাখতে হবে। তা না হলে জাফরান কিনে ঠকবেন এবং এটি নকল হওয়ার কারণে এটি খেলেও কোন উপকার হবে না। শুধু শুধু বেকার টাকা নষ্ট হবে।

বাংলাদেশের জাফরানের দাম কত

মূলত জাফরান বিদেশি পণ্য হওয়ার কারণে এর দাম অনেক বেশি। কারণ এর গুনাগুন অনেক এটি খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। বাংলাদেশের জাফরানের প্রতি কেজি মূল্যের দাম ৫ লাখ টাকা। তবে অঞ্চল ভেঁধে জাফরানের দাম কম বেশি হয়ে থাকে। ৫ গ্রাম জাফরানের দাম ২৮০০ টাকা। সুতরাং আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে জাফরান কিনতে চান তাহলে এর মূল্য এক কেজি ৫ লাখ টাকা এবং ৫ গ্রাম জাফরানের মূল্য ২৮০০ টাকা।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি নিশ্চয়ই জাফরান খাওয়ার উপকারিতা এবং রূপচর্চায় জাফরানের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এছাড়াও এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জাফরান দুধের উপকারিতা, জাফরান খেলে কি ওজন কমে, জাফরান খাওয়ার নিয়ম, জাফরান তৈরির নিয়ম, আসল জাফরান চেনার উপায়, এবং বাংলাদেশ জাফরানের দাম কত ইত্যাদি এ সকল বিষয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি এই বিষয়গুলো পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন। 

আরও পড়ুন: লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা - ত্বকে লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা 

আপনার যদি আজকের এই পোস্ট ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও জাফরান খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিন। আর আজকের এই পোস্ট বিষয়ে আপনার যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন। এ ধরনের আরো আর্টিকেল পড়তে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শাকিল বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url