কোয়েল পাখির ডিমের ১৪ টি উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানুন
কবুতরের রোগ ও ঔষধের নাম - কবুতরের রোগ প্রতিরোধের ঔষধপ্রিয় পাঠক, এখন বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে কোয়েল পাখির জনপ্রিয়তা অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে কোয়েল পাখির ডিমের চাহিদা অনেক বেড়েছে। কোয়েল পাখির ডিম অনেকেই খেতে পছন্দ করেন। কারণ এর স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। তবে অনেকেই আছেন যারা জানেন না কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা এবং ক্ষতিকর দিক দুটোই রয়েছে। তাই আজকের এই আর্টিকেলে কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা এবং ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আলোচনা করব।
আপনারা যারা কোয়েল পাখির ডিম নিয়মিত খান কিংবা যারা কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার কথা ভাবছেন। তাদের জন্য এই পোস্টটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। চলুন তাহলে বেশি দেরি না করে কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জেনে নেওয়া যায়। আপনারা যারা এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে চান। তারা অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
সূচিপত্র: কোয়েল পাখির ডিমের ১৪ টি উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানুন
- ভূমিকা
- কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
- কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিক
- বাচ্চাকে দিনে মোট কয়টি কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ানো যাবে
- কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার নিয়ম
- কোয়েল পাখির ডিম খেলে কি হয়
- কোয়েল পাখির ডিমে কি এলার্জি আছে
- কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টিগুণ
- কোয়েল পাখির ডিম প্রতিদিন কয়টা খাওয়া উচিত
- শেষ কথা
ভূমিকা
পৃথিবীতে যত প্রকার পাখির ডিম রয়েছে তার মধ্যে সবথেকে পুষ্টিকর উপযোগী ডিম হচ্ছে কোয়েল পাখির ডিম। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বড় মানুষও এই কোয়েল পাখির ডিম খেতে অনেক পছন্দ করেন। এই ডিমের রয়েছে প্রচুর উপকারিতা যা বলে শেষ করা যাবে না। অনেকেই আছেন যারা কোয়েল পাখি লালন পালন করেন। অনেকেই কোয়েল পাখি লালন পালন করে ডিম খাওয়ার উদ্দেশ্যে। নিয়মিত যদি কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া হয়, তাহলে কয়েকটি বড় বড় রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
কোয়েল পাখির ডিমের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান। এই ডিমে রয়েছে খনিজ ও ভিটামিন যা আমাদের শরীর সুস্থ সবল রাখতে সাহায্য করে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা ও এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে তেমন একটা জানেন না। তাই আপনাদের সুবিধার্থে কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হলো।
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা আজকের আর্টিকেলের মূল আলোচ্য বিষয়। সাধারণত কোয়েল পাখির ডিম খেলে শরীরের সব ধরনের পুষ্টির অভাব দূর হয়, এবং কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের কোয়েল পাখির ডিম সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য জানাবো। সাধারণত কোয়েল পাখির ডিম খুবই ছোট আকৃতির হয়ে থাকে। একটি কোয়েল পাখির ডিম আনুমানিক ৯ গ্রাম ওজনের হয়। কোয়েল পাখির ডিম আকারে ছোট হলেও এর পুষ্টিগুণের কোন কমতি নেই। চলুন তাহলে কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার- ডেঙ্গু রোগ কিভাবে ছড়ায়
দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়: কোয়েল পাখির ডিমে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন এ রয়েছে। যা আমাদের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এর এন্টি এক্সিডেন্ট চোখের পেশির দেখভাল করে চোখের পানি পড়তে দেয় না। সাধারণত চোখের বেশ কিছু সমস্যা দূর করতে সক্ষম কোয়েলের ডিম।
এলার্জি দূর করে: কোয়েল পাখির ডিমের সাদা অংশে কিছু প্রোটিন রয়েছে। এটা মূলত প্রাকৃতিক এন্টি এলার্জির মতো কাজ করে। রক্তে জমাট বাধার সমস্যা দূর করে। এছাড়াও এলার্জির বিভিন্ন লক্ষণ থাকলে কোয়েল পাখির ডিম খুবই উপকারী। তাই যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খেতে পারেন। তবে অতিরিক্ত কোয়েলের ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়ায়: কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, প্রোটিন, মিনারেল, অ্যামিনো এসিড ইত্যাদি যা শরীরের সব ধরনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পূরণ করতে সক্ষম। এবং শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে।
হার্ট সুস্থ রাখে: কোয়েল পাখির ডিমে ৬০ শতাংশ এইচডিএল ফ্যাট রয়েছে। যাকে বলা হয় উপকারী কোলেস্টেরল। সাধারণত এই উপাদানটি হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এবং হার্টে কোন প্রকার বাধা সৃষ্টি যাতে না হয় সেদিক থেকেও সুরক্ষা রাখে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: কোয়েল পাখির ডিমে পটাশিয়াম থাকায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এই খনিজ উপাদানটি রক্ত বাহিনালি এবং শিরাগুলোতে আরাম দেয়, ফলে সঠিকভাবে কাজ করে। তুলনামূলকভাবে মুরগির ডিমের চাইতে কোয়েল পাখির ডিমে অনেক বেশি পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: কোয়েল পাখির ডিমে খনিজ উপাদান গুলোর মধ্যে আরেকটি উপাদান রয়েছে, সেটি হচ্ছে সেলেনিয়াম। আর এই খনিজ উপাদানটি পোস্টেড ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। সেলেনিয়াম এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহের কোষকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যের তালিকায় সেলেনিয়াম যুক্ত খাবার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই ক্ষেত্রে আপনি আপনার খাদ্যের তালিকায় কয়েকটি করে কোয়েল পাখির ডিম রাখতে পারেন। এটি অনেক সহায়তা করতে পারে।
শরীর পরিষ্কার করে: কোয়েল পাখির ডিম শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। তাই শরীরকে বিষমুক্ত রাখতে কোয়েলের ডিম খেতে পারে। আমাদের শরীরকে বিষমুক্ত করা অনেক জরুরী। পরিবেশের অনেক ক্ষতিকর উপাদান শরীরে রক্তের সাথে মিশে শরীর দূষণ করে দেয়। আর এই সব খারাপ উপাদান রক্ত থেকে দূর করার জন্য কোয়েল পাখির ডিম ভীষণভাবে কাজ করে।
শরীরে আয়রনের অভাব দূর করে: সাধারণত শরীরের আয়রনের অভাব হল রক্তশূন্যতা ও অ্যামোনিয়া দেখা যায়। ফলে অল্প কাজে ক্লান্তি অনুভব এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই আপনার যদি এরকম কোন ধরনের সমস্যা হয়, তাহলে আপনি শরীরে আয়রনের অভাব দূর করতে কোয়েল পাখির ডিম খেতে পারেন।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে: আপনার যদি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয় অথবা আপনার আশেপাশের কারো যদি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে এর ঘরোয়া সমাধান হচ্ছে কোয়েল পাখির ডিম নিয়মিত খাওয়া। কেননা কোয়েলের ডিমে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং হজম শক্তি বাড়ায়।
কোলেস্টেরলের ভারসাম্য রক্ষা করে: কোয়েল পাখির ডিমে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি এসিড রয়েছে। যা এলজিএল বা বাজে কোলেস্টেরলের কার্যকারিতা থামাতে খুবই দরকার হয়। এইচডিএল বা উপকারী কোলেস্টেরল কোয়েল পাখির ডিমে ফ্যাটের পরিমাণ ৬০%। সাধারণত এটি এইচডিএল রক্ষায় ব্যয় হয়। আর এর ফলে দেহে ভালো কোলেস্টেরল ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় থাকে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী: আমাদের দেশে প্রায় সব মানুষেরই একটি প্রধান সমস্যা রয়েছে আর সেটি হচ্ছে ডায়াবেটিস যা সব সময় ওঠা নামা করে। অর্থাৎ কখনো ডায়াবেটিস বাড়ে আবার কখনো কমে। সাধারণত চীনে কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করা হয়।
মূত্রথলি ও কিডনিতে পাথর হতে দেয় না: আপনি যদি নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া অভ্যাস করেন। তাহলে আপনার কখনো মূত্রথলিত এবং কিডনিতে পাথর হবে না। কোয়েল পাখির ডিম মূত্রথলী এবং কিডনিতে পাথর হওয়া থেকে বাধা সৃষ্টি করে থাকে।
লিভার, চুল, ত্বক ও চোখে সুরক্ষা দেয়: কোয়েল পাখির ডিমে থাকা রিবোফ্লোবিন আমাদের দেহের লিভার, ত্বক, চুল ও চোখের সুস্থতা নিশ্চিত করে। আমাদের শরীরের লোহিত রক্তকণিকা উপাদানেও রিবোফ্লোবিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কোয়েল পাখির ডিম আকারে ছোট হলেও এতে প্রচুর পরিমাণে রিবোফ্লোবিন রয়েছে। তাই কোয়েল পাখির ডিম নিয়মিত খেলে লিভার, চুল, ত্বক ও চোখ সুস্থ থাকে।
শিশুদের জন্য উপকার: কোয়েল পাখির ডিম শিশুদের জন্য খুবই উপকারী। শিশুদেরকে যদি নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম এক থেকে দুইটি খাওয়ানো যায়। তাহলে শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বুদ্ধিমতা বিকাশ ঘটবে। এছাড়াও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তাই আপনার শিশুকে প্রতিদিন কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ানোর অভ্যাস করুন।
কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষতিকর দিক
কোয়েল পাখির ডিমে যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে যা এই অংশে আপনাদের সাথে আলোচনা করব। সাধারণত কোয়েল পাখির ডিম কোলেস্টেরলের সমস্যা বাড়ায়। কোয়েল পাখির ১০০ গ্রাম ডিমে ৮৪৪ গ্রাম কোলেস্টেরল রয়েছে। যা অন্যান্য ডিমের তুলনায় অনেক বেশি। তাই আপনাদের মধ্যে যাদের কোলেস্টেরলের সমস্যা রয়েছে তারা কখনোই অতিরিক্ত পরিমাণে কোয়েল পাখির ডিম খাবেন না।
এছাড়াও আপনাদের মধ্যে যাদের ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের সমস্যা রয়েছে, তারা কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ কোয়েল পাখির ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট যা হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস রোগীদের সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
আরও পড়ুন: সাপে কামড়ালে কি করবেন, কি করবেন না - সাপে কামড়ালে প্রাথমিক চিকিৎসা
আপনারা যারা অতিরিক্ত পরিমাণে কোয়েল পাখির ডিম খেতে পছন্দ করেন। তারা অতিরিক্ত কোয়েলের ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ কোন জিনিস অতিরিক্ত খাওয়া কখনোই ভালো নয়। তাই প্রাপ্ত বয়স্করা প্রতিদিন ৪টি করে কোয়েল পাখির ডিম খেতে পারেন। এবং ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১ থেকে ২ টি কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া ভালো।
বাচ্চাকে দিনে মোট কয়টি কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ানো যাবে
- সাধারণত ১ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত বয়সের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দিনে ২ থেকে ৩ টি করে কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ানো যাবে।
- ৮ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বয়সের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ টি করে কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ানো যাবে।
- এছাড়াও ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ টি করে কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ানো যাবে।
তবে সবচাইতে ভালো হবে কোয়েল পাখির ডিমের ক্ষেত্রে দিনে বাচ্চাদের ২ টি এবং খুব বেশি হলে ৩ টি ডিম খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন।
কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার নিয়ম
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা কোয়েল পাখির ডিম খেতে অনেক পছন্দ করে। কিন্তু অনেকেই কোয়েল পাখির ডিম কিভাবে খেতে হয় সেই ব্যাপারে জানে না। কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার নিয়ম একদম সহজ। সাধারণত আপনি কোয়েল পাখির ডিম সিদ্ধ করে খেতে পারেন। যেভাবে মুরগির ডিম সিদ্ধ করে খান ঠিক সেভাবেই কোয়েল পাখির ডিম সিদ্ধ করে খেতে পারেন।
প্রথমে ডিমটি গরম পানি দিয়ে ৭ থেকে ৮ মিনিটের মতো সিদ্ধ করে নিতে হবে। আপনি কোয়েল পাখির ডিমটি এমনভাবে সিদ্ধ করবেন যাতে ডিমের কুসুম ভালোভাবে সিদ্ধ হয়। কারণ আমাদের চারপাশে এত বেশি ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস রয়েছে যার ফলে শুধু ডিম নয়, যে কোন জিনিসই ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে। এবার কোয়েল পাখির ডিম গুলো ৭ থেকে ৮ মিনিটের মতো ভালোভাবে সিদ্ধ করে নেওয়ার পর, আপনি ডিমের খোসা গুলো ছাড়িয়ে খেতে পারেন।
কোয়েল পাখির ডিম খেলে কি হয়
কোয়েল পাখির ডিম অল্প মূল্যে পাওয়া যায়, কিন্তু এর পুষ্টিগুণ অনেক। এলাকার ছোট বড় বাজারে সুপার শপগুলিতে কোয়েল পাখির ডিম বেশি পাওয়া যায়। কোয়েল পাখির ডিম আকৃতিতে ছোট হয় এবং মুরগির ডিমের চাইতে তুলনামূলকভাবে কম গন্ধ থাকার কারণে এই কোয়েল পাখির ডিম অনেকেই খেতে খুব পছন্দ করেন। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ফ্যাট, আইরন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, চিনি ইত্যাদি আরো অনেক ধরনের খাদ্য উপাদান। সাধারণত কোয়েল পাখির ডিম একসাথে দুইটা তিনটা অনায়াসেই খাওয়া যায়। চলুন তাহলে কোয়েল পাখির ডিম খেলে কি হয় তা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
আরও পড়ুন: পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় | পায়ের গোড়ালি ব্যথার কারণ ও প্রতিকার
- চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে।
- দেহের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- হার্টের কার্যক্ষমতা উন্নত করতে পারে।
- এসিডিটির সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
- স্মৃতিশক্তি সবল রাখতে সাহায্য করে।
- সবচেয়ে বড় কথা কোয়েল পাখির ডিম ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
- এছাড়াও বাচ্চাদের মানসিক ও শারীরিক বুদ্ধিমতার বিকাশ ঘটায়।
- হজম শক্তি বাড়ায় এবং পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখে।
- শরীরের নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- উচ্চ রক্তচাপ কমায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়।
- এছাড়াও কোয়েল পাখির ডিম খেলে এলার্জির সমস্যা দূর হয়।
কোয়েল পাখির ডিমে কি এলার্জি আছে
আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন যে কোয়েল পাখির ডিমে কি এলার্জি আছে অথবা কোয়েল পাখির ডিম খেলে কি অ্যালার্জির সমস্যা হয়। আর এটার উত্তর হচ্ছে না। কোয়েল পাখির ডিমে কোনরকম এলার্জি নেই। বরং আপনি যদি প্রতিদিন কোয়েল পাখির ডিম খান তাহলে আপনার যদি কোন ধরনের এলার্জির সমস্যা থেকে থাকে তাহলে সেটা দূর হয়ে যাবে। কেননা কোয়েল পাখির ডিম এলার্জি নিরাময় করতে বিশেষভাবে কাজ করে। তাই আপনারা যারা এলার্জির সমস্যায় ভুগছেন তারা চাইলে নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম খেতে পারেন।
কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টিগুণ
আমরা অনেকেই কোয়েল পাখির ডিম খেতে পছন্দ করি। কিন্তু এই কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। যারা কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তাদের জন্যই আমাদের আজকের আলোচনা। পৃথিবীতে যত ধরনের খাদ্য ডিম রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে উপযোগী এবং পুষ্টিকর ডিম হচ্ছে কোয়েল পাখির ডিম। কোয়েল পাখির ডিমে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।
- ক্যালোরি ১৪ গ্রাম।
- পটাশিয়াম ১২ মিলিগ্রাম।
- আমিষ ১ মিলিগ্রাম।
- প্রোটিন ১.২ গ্রাম।
- ফসফরাস ২%।
- ফ্যাট ১ গ্রাম।
- আয়রন ২%।
- রিবোফ্লোভিন ৪%।
- সেলেনিয়াম ৪%।
- কোলেস্টেরল ৭৬ মিলিগ্রাম।
- সোডিয়াম ১২.৭ মিলিগ্রাম।
- ফলিক অ্যাসিড ৮ মাইক্রগ্রাম।
- ভিটামিন এ ১%।
- ভিটামিন বি-১২-- ২%।
- প্যানথনিক অ্যাসিড ২%।
- ওমেগা- ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ৪ মিলিগ্রাম।
- ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড ৮৪ মিলিগ্রাম।
কোয়েল পাখির ডিম প্রতিদিন কয়টা খাওয়া উচিত
কোয়েল পাখির ডিমে শরীরের প্রয়োজনীয় সব ধরনের ভিটামিন, অ্যামিনো অ্যাসিড, মিনারেল বিদ্যামান রয়েছে, যা কিনা আমাদের শরীরের জন্য খুবই দরকার। কোয়েল পাখির ডিম কোন কোন দেশে মেডিসিন হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। প্রতিদিন যদি কোয়েল পাখির ডিম খাওয়া যায় তাহলে হার্টের কার্যক্ষমতা উন্নত হবে। এছাড়াও কোয়েল পাখির ডিম খেলে হজম শক্তি, কিডনি, ও লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়বে।
আরও পড়ুন: থানকুনি পাতা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা | থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম
বাচ্চাদের জন্য কোয়েল পাখির ডিম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চাদেরকে অবশ্যই কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ানো উচিত। কারণ কোয়েল পাখির ডিম খেলে ব্রেইন সব সময় সতেজ থাকে এবং স্মৃতিশক্তিও ভালো থাকে। এছাড়াও বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক এবং বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে কোয়েল পাখির ডিম। বড় মানুষ ও বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধারা প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ টা কোয়েল পাখির ডিম খেতে পারেন। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে দুইটা করে কোয়েল পাখির ডিম দেওয়া যথেষ্ট ।সাধারণত কোয়েল পাখির ডিম শাকসবজির সাথে সিদ্ধ করে মিশিয়ে সপ্তাহে দুই দিন গরমের সময়। এবং শীতের সময় তিন থেকে পাঁচ দিন খাওয়া যেতে পারে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আজকের এই আর্টিকেলে কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনি যদি প্রতিদিন কোয়েল পাখির ডিম খান তাহলে কি কি উপকার পাবেন তা সম্পর্কে ইতিমধ্যে জেনে গেছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো যে আপনি কখনোই অতিরিক্ত পাখির ডিম খাবেন না। কারণ এটি উপকারের চাইতে ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। তাই পরিমাণ মতো কোয়েল পাখির ডিম খেতে হবে। এতে স্বাস্থ্যের অনেক উপকারিতা রয়েছে। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হবেন।
আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি বিন্দুমাত্র উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিন। আশা করি আজকের এই পোস্টটি আপনি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। আপনার যদি কোন মতামত এবং প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদেরকে জানাতে পারেন। এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
শাকিল বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url