লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা - ত্বকে লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা

টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতাআমরা অনেকেই আছি যারা লেবু খেতে খুব পছন্দ করি। আবার আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা লেবু পছন্দ করি না। কিন্তু লেবু পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই আছে। কারণ লেবু দিয়ে ভাত খাওয়া সহ আরও বিভিন্ন কাজে লেবু ব্যবহার হয়। লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে অনেক। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে লেবুর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ত্বকে লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব।

রূপচর্চা থেকে শুরু করে খাওয়া পর্যন্ত সকল কাজেই প্রায় লেবু ব্যবহার হয়। তাই আপনারা যারা লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ত্বকের লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান। তারা অবশ্যই পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

সূচিপত্র: লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা - ত্বকে লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা 

ভূমিকা

বাঙালির খাবারের পাতে লেবু থাকবে না এমনটা যেন হওয়ার নয়। লেবু যেমন সহজলভ্য তেমনি এর গুরুত্বেরও কোন শেষ নেই। প্রতিদিন লেবুর রস খাওয়ার উপকারিতা অনেক। তবে এর অপকারিতাও রয়েছে। কিন্তু লেবুর অপকারিতার চেয়ে উপকারিতা বেশি। লেবু ভিটামিন সি এর একটি সমৃদ্ধ উৎস। এছাড়াও গৃহস্থলী বিভিন্ন সমস্যার সমাধানেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে লেবু। আবার ত্বকে লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতাও রয়েছে অনেক। সাধারণত সর্দি কাশি থেকে শুরু করে ক্যান্সার পর্যন্ত প্রতিরোধ করতে পারে লেবু। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনা গুলো শুরু করা যাক।

লেবুর উপকারিতা

  • লেবুর রস ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
  • লেবুর রস বুক জ্বালা ও আলসার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে।
  • সাধারণত গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে পরিপাক প্রক্রিয়াকে কার্যকর ও লিভার কে সুস্থ রাখে।
  • লেবুর রস ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে।
  • সাধারণত লেবুতে ভিটামিন সি থাকে যা অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে এবং ঠান্ডা লাগা থেকে প্রতিরোধ করে।
  • লেবু রক্ত পরিশোধন করতে সাহায্য করে।
  • লেবু অর্থোইটিসের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।
  • এছাড়াও লেবু শরীরের ওজন কমাতেও সাহায্য করে।

লেবুর অপকারিতা

  • অতিরিক্ত পরিমাণে লেবু ও লেবুর শরবত পান করলে পেট ব্যথা করতে পারে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে লেবুর শরবত খেলে শরীর দুর্বল লাগতে পারে।
  • বেশি পরিমাণে লেবু খেলে গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই বেশি পরিমাণে লেবু খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • এছাড়াও এসিডিটির সমস্যা থাকলে অধিক পরিমাণে লেবু খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ অধিক পরিমাণে লেবু খেলে বুক জ্বালা করতে পারে।
  • বেশি পরিমাণে লেবু খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে।
  • অতিরিক্ত লেবু খেলে দাঁতের ক্ষয় হতে পারে।
  • অতিরিক্ত লেবু খেলে বমি বমি হতে পারে।
  • এছাড়াও বেশি পরিমাণে লেবু খেলে মুখের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ত্বকে লেবুর উপকারিতা

  • সাধারণত লেবু মুখের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
  • লেবু হাতের ও পায়ের কোনই এর কালচে ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
  • সাধারণত লেবুতে ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি অকাল বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে।
  • এছাড়াও লেবু মাথার খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।
  • লেবু ও লাল চিনি একসাথে মিশিয়ে ঠোঁটে মাখলে ঠোঁটের মৃত কোষ দূর হয়ে যায়।
  • আবার লেবু ও বেকিং সোডা একসাথে মিশিয়ে দাঁত পরিষ্কার করলে দাঁতের হলদে ভাব দূর হয়। এবং দাঁত ঝকঝক করে।

ত্বকে লেবুর অপকারিতা

সাধারণত ত্বকের জন্য লেবুর উপকারিতা অনেক। তবে এর অপকারিতাও রয়েছে। যেমন :ভুল করে কখনো লেবু সরাসরি মুখে মাখবেন না। এতে আপনার ত্বক পড়ে যেতে পারে কারণ লেবুর রস প্রচন্ড এসিডযুক্ত হয়। যদি আপনি কখনো ত্বকের জন্য লেবু ব্যবহার করতে চান। তাহলে ত্বকে লেবু ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন ধরনের উপাদানের সাথে মিশিয়ে লেবু ব্যবহার করুন। তাহলে ত্বকের কোন সাইডএফেক্ট হবে না।

পাতি লেবুর উপকারিতা

  • পাতি লেবু দেহের চর্বি ও ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে।
  • পাতি লেবুতে সাইটেট রয়েছে। যা কিডনিতে পাথর হতে দেয় না।
  • সাধারণত সকালে ঘুম থেকে উঠে পাতি লেবুর পানি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর হয়। এবং শক্তি বাড়ে।
  • এছাড়াও পাতি লেবু পেটের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • পাতি লেবুতে রয়েছে ফাইবার, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, আয়রন, ইত্যাদি।
  • সাধারণত পাতি লেবুতে থাকা ভিটামিন সি, শাকসবজিতে থাকা আইরন শোষণ করে। যার ফলে দেহের রক্তস্বল্পতা কমে।

পাতি লেবুর অপকারিতা

পাতি লেবু খেলে যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনভাবে এর অপকারিতা রয়েছে। যেমন: পাতি লেবু বেশি পরিমাণে খেলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সাধারণত এসিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আপনি যদি প্রতিদিন পাতি লেবু খান বা খেয়ে থাকেন। তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে ভালোভাবে পরামর্শ করে নিবেন।

লেবুর খোসা খাওয়ার নিয়ম

আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না যে লেবুর পাশাপাশি লেবুর খোসা ও অনেক উপকারী। লেবুর খোসা খেলে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। লেবুর খোসাতে রয়েছে ভিটামিন সি ও সাইট্রিক এসিড। যা আমাদের দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে। এছাড়াও লেবুর খোসাতে রয়েছে সাইট্রিক বায়ো ফ্লেভোনয়েড যা আমাদের শরীরের স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে থাকে।

লেবুর খোসার ব্যবহার

  • ছোট একটা লেবুর খোসার টুকরোর সাথে ২ টেবিল চামচ চালের গুড়া এবং ঠান্ডা দুধ দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিয়ে, আপনার ত্বকে ব্যবহার করুন। এতে আপনার ত্বকের মৃত কোষ গুলোকে জীবিত করে তুলবে।
  • সাধারণত লেবুর খোসা ফেস স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আপনি এক মুঠো লেবুর খোসার পেস্ট এর মধ্য ১-২ কাপ চিনি এবং ত্বকের ধরন বুঝে অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। এরপর পেস্টটি ভেজা ত্বকে আলতো ভাবে ঘষে লাগিয়ে নিন। এবার কিছুক্ষণ পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই স্ক্রাবটি সপ্তাহে একবার ব্যবহার করুন। এই স্ক্রাব ব্যবহার করলে আপনার ত্বক উজ্জ্বল হবে।
  • শীতের সময় পা ফাটা দূর করতে লেবুর খোসার গুঁড়োতে পেট্রোলিয়াম জেলি মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। এবং এটি ফাটা স্থানে লাগিয়ে পায়ে মোজা পড়ে নিন। এবার কয়েক ঘন্টা রেখে দিন। তারপরে ঠান্ডা পানি দিয়ে পা ধুয়ে ফেলুন। এটা ব্যবহার করলে আপনার পা নরম ও স্বাস্থ্যকর দেখাবে।
  • রুম ফ্রেশনার হিসেবে আপনি লেবুর খোসা ব্যবহার করতে পারেন। তার জন্য আপনাকে শুকনো ফুল এবং যেকোনো ধরনের তেলের সাথে লেবুর খোসা মিশাতে হবে। তারপরে সাইট্রাস সুগন্ধযুক্ত মিশ্রণটি একটি পরিষ্কার স্প্রে বোতলে নিয়ে আপনার ঘরে স্প্রে করতে হবে।
  • আপনি যদি আপনার ঘরের আসবাবপত্র ও অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র জীবাণুমুক্ত রাখতে চান। তাহলে লেবুর খোসা ব্যবহার করুন। লেবুর খোসা পানি দিয়ে সিদ্ধ করে ভালো করে ছেঁকে নিন এবং ওই পানিটির মধ্য ভিনেগার বা ব্রেকিং সোডা মিশিয়ে ব্যবহার করুন। এটা ব্যবহার করলে আপনার ঘরের আসবাবপত্র জীবাণুমুক্ত থাকবে।
  • এছাড়াও আপনার ঘরে যে সমস্ত পোকামাকড় রয়েছে, সেগুলোকে কমাতে লেবুর খোসা ব্যবহার করতে পারেন।

অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার উপকারিতা

অতিরিক্ত লেবু খেলে রক্তে আয়রনের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। কারণ অতিরিক্ত পরিমাণে লেবু খেলে শরীরে ভিটামিন সি এর পরিমাণ বেড়ে যায়। যেটা মানুষের দেহে রক্তে অধিক পরিমাণে আয়রন সংরক্ষণ করে।

চুলে লেবুর উপকারিতা

  • লেবুর রস চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। লেবুর রসের সাথে ভিনেগার ও লবণের মিশ্রণ করে চুলে লাগান।
  • সাধারণত ৩ সপ্তাহে একবার করে চুলে লেবুর রস ও জলপাইয়ের তেল একসাথে মিশিয়ে চুলে আলগা করে লাগান। এর ফলে চুলের আগা ফাটা বন্ধ হবে।
  • লেবুতে রয়েছে সাইট্রিক এসিড, ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, যা চুল দ্রুত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে।
  • আপনার চুল যদি ঝলমলে ও তাড়াতাড়ি লম্বা করতে চান। তাহলে নারকেল তেল, জলপাই তেল ও লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে চুলে নিয়মিত ব্যবহার করুন।
  • এছাড়াও প্রাকৃতিক ভাবে যদি আপনার চুল ঝলমলে করতে চান। তাহলে লেবুর সাথে নারিকেলের পানি মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করুন। এই পদ্ধতিটি কন্ডিশনারের কাজ করবে।

গরম পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা

  • সকালে খালি পেটে গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে শরীরের পিএইচ এর ভারসাম্য ঠিক থাকে। যা শরীরের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • লেবু ত্বকে ব্যবহার করলে কুচকে যাওয়া চেহারা ও বয়সের ছাপ কমে।
  • প্রতিদিন সকালে যদি হালকা গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া যায়। তাহলে সারাদিনের হজম শক্তি বাড়বে।
  • লেবুতে থাকা ভিটামিন সি, এটা দেহের হরমোন সক্রিয় রাখে। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
  • লেবু শরীরের অ্যান্টি অক্সিডেন্টের চাহিদা পূরণ করে থাকে। এবং কিডনিকে পাথর হওয়া থেকে প্রতিরোধ করে।
  • লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম যা শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে থাকে। এবং লিভার থেকে ক্ষতিগ্রস্ত টনিক উপাদান বের করে শরীরকে সুস্থ রাখে।

খালি পেটে লেবু খাওয়ার উপকারিতা

  • খালি পেটে লেবু খেলে শরীরের মেদের পরিমাণ কমে।
  • খালি পেটে লেবু খেলে হজম শক্তি বাড়ে। এবং পেটের সমস্যা স্বাভাবিকভাবে সমাধান করে।
  • খালি পেটে লেবু খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। এবং শরীর চাঙ্গা থাকে।
  • সাধারণত লেবু ইমিউনিটি বাড়ায়। লেবুতে থাকা এসকোব্রিক এসিড ও ভিটামিন সি এগুলো শরীরের জ্বর, সর্দি, ও ঠান্ডা লাগা থেকে দূরে রাখে।
  • লেবুতে সাইট্রিক এসিড রয়েছে, যা কিডনির কার্যক্ষমতা সক্রিয় করে।
  • এছাড়াও লেবুতে থাকা ভিটামিন বি এবং পটাশিয়াম যা রক্তস্বল্পতা দূর করে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আশা করি আপনি পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। আশা করি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন। আজকে আমরা আমাদের এই লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ত্বকে লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা পোস্টে পাতি লেবুর উপকারিতা, পাতি লেবুর অপকারিতা, লেবুর খোসা খাওয়ার নিয়ম, লেবুর খোসার ব্যবহার, অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার উপকারিতা, চুলে লেবুর উপকারিতা, গরম পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা, খালি পেটে লেবু খাওয়ার উপকারিতা, ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেছি।

আশা করি আমাদের এই লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং ত্বকে লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে এবং আপনারা উপকৃত হবেন। এ ধরনের আরও আর্টিকেল পড়তে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি ফলো করুন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শাকিল বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url