বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায় | বদ নজর থেকে বাঁচার দোয়া

নামাজ আদায় করার সঠিক নিয়ম - নামাজের রাকাত ও ফরজ কয়টিবদ নজর মানে খারাপ দৃষ্টি। অনেক মানুষ রয়েছে যাদের দৃষ্টি খারাপ। খারাপ দৃষ্টিতে বা খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে তাকালে ক্ষতি হয়, এবং মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। কোরআন ও হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত বদনজর। আজকের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায় এবং বদ নজর থেকে বাঁচার দোয়া সম্পর্কে জানাবো। আমাদের এই প্রতিবেদনটি মনোযোগ সহকারে পড়লে, আপনি আপনার বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানতে পারবেন।

চলুন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায় এবং বদ নজর থেকে বাঁচার দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে কিছু আমল ও করণীয় সম্পর্কে জেনে নেই। আপনারা যারা এই বিষয়গুলি সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

সূচিপত্র: বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায় | বদ নজর থেকে বাঁচার দোয়া

ভূমিকা

বদ নজর মানে খারাপ দৃষ্টি। এমন অনেক মানুষ রয়েছে যাদের দৃষ্টি খারাপ। খারাপ উদ্দেশ্যে নিয়ে তাকালে ক্ষতি হয়। মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত বদনজর। আর এ বদনজর থেকে বাঁচার জন্য রাসূল (সা:) কিছু আমল ও দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনের কয়েকটি জায়গায় এই বদনজরের কথা বলা হয়েছে। এখন আপনারা যারা বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায় এবং বদনজর থেকে বাঁচার দোয়া সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন, তাদের সুবিধার্থে আজকের এই প্রতিবেদনটি। চলুন তাহলে বেশি দেরি না করে মূল আলোচনা গুলো শুরু করা যাক।

বদ নজর থেকে বাঁচার দোয়া

মানুষের বদ নজর থেকে বাঁচতে নবীজি দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। হযরত আবু সাঈদ (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা:) একবার কোন একটি রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আর তখন জিবরাইল (রা:), রাসুল (সা:) এর কাছে এসে বলেছিলেন, হে মোহাম্মদ আপনি কি অসুস্থতা বোধ করছেন। রাসুল (সা:) বলেন হ্যাঁ। আর তখন  জিবরাইল (রা:) এই দোয়াটি পড়লেন।

আরও পড়ুন: নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ- যে কারণে নামাজ ভঙ্গ হয়

আরবি: بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ 

উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আরকিকা, মিন কুল্লি শাইয়িন ইউজিকা, মিন শাররি কুললি নাফসিন আউ আইনিন হাসিদিন, আল্লাহু ইয়াশফিকা, বিসমিল্লাহি আরকিকা।

অর্থ: আল্লাহর নামে আপনাকে ফুঁ দিচ্ছি, যেসব জিনিস আপনাকে কষ্ট দেয়। সেসব প্রাণের অনিষ্ট কিংবা হিংসুকের বদ নজর থেকে আল্লাহ আপনাকে শিফা দিন। আল্লাহর নামে আপনাকে ফুঁ দিচ্ছে। (মুসলিম, হাদিস: ৫৫১২) 

সুতরাং দোয়াটি পড়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বারবার ফু দিলে, ইনশাল্লাহ আস্তে আস্তে বদ নজর কেটে যাবে।

বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায়

বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনি আপনার বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে পারবেন। বদনজর থেকে বাঁচতে রাসূল (সাঃ) ছোটদের কোলে করে নিয়ে বিভিন্ন দোয়া পড়ে ফু দিতেন। হাদিসে এমন অনেক দোয়া বর্ণিত হয়েছে। নিচে দেওয়া এই দোয়াটি পড়ে রাসূল (সাঃ) হাসান ও হুসাইনকে ফু দিতেন।

আরবি: أُعِيذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لامَّةٍ

উচ্চারণ: উইজুকুমা বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন।

অর্থ: আমি তোমাদের উভয়কে আল্লাহর কালামের আশ্রয়ে রাখতে চাই। সবধরনের শয়তান হতে কষ্টদায়ক, বস্তু হতে এবং সব ধরনের বদ নজর হতে। (বুখারি, হাদিস: ৩৩৭১)

কোরআন হাদিসে বদ নজরের বিষয়

মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এতটাই খারাপ হয়, যা আপনার জীবনকে নষ্ট করে দিতে যথেষ্ট। তাই বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসের নজর বিষয়ক বিভিন্ন হাদিস আছে। কোরআন ও হাদীসে বদ নজর বিষয়ক কয়েকটি হাদিস আলোকপাত রয়েছে। 

কাফেররা যখন উপদেশ বাণী শুনে, তখন তারা যেন তাদের দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা তোমাকে আঁচড়ে ফেলবে। এবং তারা বলে এ তো এক পাগল। (সূরা কলম, আয়াত: ৫১)

আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা:) বলেছেন, তোমরা বদ নজরের প্রবাহ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো। কেননা বদনজরের প্রবাহ সত্য। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৫০৮)

আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) এই আয়াতের তাফসীরে বলেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত, আয়াতে তাদের দৃষ্টি দ্বারা তোমাকে আছড়ে ফেলবে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে তোমার প্রতি বদনজর দেবে। অর্থাৎ তারা তোমাকে হিংসার প্রতিফলন ঘটিয়ে রোগী বানিয়ে দিবে বা অসুস্থ করে দেবে। যদি আল্লাহর তোমার প্রতি হেফাজত না থাকে, তাহলে আয়াতটি প্রমাণ বহন করে যে বদ নজরের কুপ্রভাবে বাস্তবতা রয়েছে। এটা আল্লাহর হুকুমে। (তাফসীরে ইবনে, কাসির: ৪|৪১০)

সাহাবী আবু সহল ইবনে হুনাইফ বদ নজর এর বিষয়ে তার ঘটনা সুবিখ্যাত। একবার গোসল করার জন্য হুনাইফ কাপড় খুললেন। গৌরবর্ণ, সুঠাম দেহি ও উন্নত ধরনের অঙ্গ, সৌষ্ঠব। হঠাৎ করে তার ওপর নজর পড়ে, আমের ইবনে রবিআর। আর সঙ্গে সঙ্গে রবিআর মুখ থেকে বেরিয়ে আসে আমি আজ পর্যন্ত এমন সুন্দর ক্লান্তিময় দেহ কারো দেখিনি। এরপর সাহাবী আবু সহল ইবনে হুনাইফের দেহে ভীষণ জ্বর চলে আসে। আর এই সংবাদটা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পেয়ে আমের ইবনে রাবিয়াকে আদেশ করলেন। সে যেন ওযু করে ওযুর পানি থেকে কিছু অংশ পাত্রে রেখে দিয়ে তারপর সেটা সহল ইবনে হুনাইফের দেহে যেন ঢেলে দেয়। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আদেশ মোতাবেক কাজ করা হলে, সাহাবী আবু সহল ইবনে হুনাইফ রক্ষা পান। তার জ্বর চলে যায় এবং তিনি সম্পূর্ণ রূপে সুস্থ হয়ে যান।

আর এই ঘটনাই মহানবী (সাঃ) আমের ইবনে রবিয়াকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, তোমাদের কেউ নিজের ভাইকে কেন হত্যা করতে চায়। তোমার দৃষ্টিতে যখন তার দেহ সুন্দর প্রতিভাত হয়েছিল, তখন তুমি তার জন্য বরকতের দোয়া কেন করলে না। মনে রেখো বদনজর লেগে যাওয়াটা সত্য। (মুআক্তা ইমাম মালেক, হাদিস: ১৭১৪)

ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে বদ নজর

ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে বদ নজরকে কুদৃষ্টি বলা হয়। যার মাধ্যমে একজন মানুষের ক্ষতি হয়ে থাকে, এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে। বদ নজরের প্রভাব ও প্রক্রিয়া ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে একদমই সত্যি। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি নানা রকম হয়ে থাকে। কেউ ভালো চোখে তাকায় আবার কেউ খারাপ চোখে তাকায়। আর এই দৃষ্টিভঙ্গের জন্য অনেক সময় কোন ভালো জিনিসের প্রতি আমাদের কুদৃষ্টি পড়ে যায়, এবং বদ নজর লাগে। খারাপ নজর লাগলে নজর কৃত ব্যক্তি জিনিস ক্ষতি ও ধ্বংসের সম্মুখীন হয়। তাই কারো ক্ষেত্রে বদনজর বা কুদৃষ্টি লেগে গেলে এই বিশ্বাস রাখতে হবে, যে দৃষ্টিশক্তির মধ্যে এমন (খারাপ) ক্ষমতা, মহান আল্লাহ দান করেছে। তাই মানুষের উচিত আল্লাহর উপর ভরসা রাখা এবং আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।

মানুষের ভালো কিছু দেখলে যে দোয়া পড়তে হবে

বদনজর একটি খারাপ দৃষ্টিভঙ্গি। বদনজর থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখতে হবে। বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। কারণ বদ নজর কথাটি সত্যি। এই কথাটি ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এসেছে। বদনজর সাধারণত মানুষের ভালো কিছু দেখলেই, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তা প্রকাশ পায়। তাই মানুষের ভালো কিছু দেখলে আপনার কুদৃষ্টি যেন সেই জিনিসের উপর না পড়ে এর জন্য দোয়া পড়তে হবে।

মাশাআল্লাহ | লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ | বলা উচিত। এতে কুদৃষ্টির প্রভাব বিনষ্ট হয়ে যায়। আর ওই ব্যক্তি বা জিনিস কুদৃষ্টির প্রক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকে। বদ নজর পড়া মানুষের কোন নিজস্ব দোষ নয়। তাই বদনজর যেন সে জিনিসে না পড়ে তাই উক্ত দোয়াটি আমাদের সকলেরই পড়া উচিত।

বদ নজর থেকে বাঁচতে কুরআনী আমল

প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা সূরা ফালাক, সূরা ইখলাস, ও সূরা নাস তিনবার আক্রান্ত ব্যক্তিকে পড়ে ফু দিলে, সেই ব্যক্তির ওপর সারাদিন কোন খারাপ দৃষ্টি পড়ে না। আবু সাঈদ (রা:) বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ। সুরা ফালাক ও সূরা নাস অবতীর্ণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নিজ ভাষায়। জ্বীন ও বদনজর থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। পরিশেষে যখন সূরা দুটি অবতীর্ণ হল, তখন সূরা দুটি দ্বারা আশ্রয় প্রার্থনা করতে লাগলেন এবং অন্যান্য সবকিছু পরিহার করলেন। (তিরমিজি, ২০৫৮)

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আজকের এই আর্টিকেলে বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায়,বদ নজর থেকে বাঁচার দোয়া, কোরআন হাদিসে বদ নজরের বিষয়, ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে বদ নজর, মানুষের ভালো কিছু দেখলে যে দোয়া পড়তে হবে, বদ নজর থেকে বাঁচতে কুরআনী আমল ইত্যাদি এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি বিন্দুমাত্র উপকৃত হয়ে থাকেন। তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে, তাদেরকেও বাচ্চাদের বদ নজর থেকে বাঁচার উপায় এবং বদ নজর থেকে বাঁচার দোয়া সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিন।

এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল নিয়মিত পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন ভিজিট করতে থাকুন। কারণ আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের গুপ্তপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শাকিল বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url