শীতকালে খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতা ও খেজুরের রসের পুষ্টিগুণ

৯ উপায়ে কিভাবে সুন্দর হওয়া যায়- রাতারাতি ফর্সা হওয়ার উপায়শীতের একটি পছন্দের খাবার হচ্ছে খেজুরের রস। খেজুরের রস কম বেশি অনেকেই পছন্দ করে থাকে। শীতকালে বিশেষ খাবারের মধ্যে খেজুরের রস অন্যতম একটি খাবার। খেজুরের রস খেতে আমরা সবাই পছন্দ করি। তাই আজকের এই পোস্টে আমরা শীতকালে খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতা এবং খেজুরের রসের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

তাহলে চলুন আর বেশি দেরি না করে শীতকালে খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতা এবং খেজুরের রসের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানা যাক। আপনারা যারা খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতা এবং এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে চান। তারা অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

সূচিপত্র: শীতকালে খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতা ও খেজুরের রসের পুষ্টিগুণ

ভূমিকা

পুষ্টিগুণের দিক দিয়ে খেজুরের রসের উপকারিতা অনেক। সাধারণত গ্রাম অঞ্চলে খেজুরের রস বেশি দেখা যায়। খেজুরের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ ও পুষ্টি সমৃদ্ধ উপাদান। শীতকালে কুয়াশা ঢাকা ভরে খেজুরের রস যেন এক অমৃত। শহর অঞ্চলে খেজুরের রস পাওয়া খুবই কষ্টকর হলেও গ্রাম অঞ্চলে মানুষের কাছে শীতকালে খেজুরের রস ছাড়া শীত যেন জমে না। খেজুরের রসে রয়েছে ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ সকল পুষ্টিগুণ উপাদান। চলুন তাহলে দেরি না করে মূল আলোচনা গুলো শুরু করা যাক।

শীতকালে খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতা 

    খেজুরের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ ও পুষ্টি সমৃদ্ধ উপাদান। পুষ্টিগুণের দিক দিয়ে খেজুরের রসের উপকারিতা অনেক বেশি। খেজুরের রসের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। আজকের এই পোস্টে আপনাদের জন্য খেজুরের রসের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানাতে চাই। চলুন তাহলে দেরি না করে খেজুরের রসের উপকারিতা গুলো কি তা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

    • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
    • হজম শক্তি বাড়াতে
    • ওজন কমাতে
    • শরীরে ক্লান্তি দূর করতে
    • প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংক
    • হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি
    • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
    • উচ্চ রক্তচাপ কমাতে
    • অস্থিরতা দূর কারক
    • কোষের ক্ষতি কমাতে

    কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: খেজুরের রস কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে ভীষণভাবে সাহায্য করে। এছাড়াও খেজুরের রসের গুড় বা রস অনিদ্রা ও কোষ্ঠকাঠিন্যর রোগ দূর করতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই শীতকালে ভোরবেলা খেজুরের রস খাওয়া উচিত।

    হজম শক্তি বাড়াতে: খেজুরের রস আমাদের হজম শক্তি ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। খেজুরের রস খাওয়ার ফলে খাবার তাড়াতাড়ি হজম হয়। তাই আপনি শীতকালে প্রতিদিন খাবার খাওয়ার পর খেজুরের রস খান। তাহলে আপনার হজম শক্তি অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে।

    ওজন কমাতে: সাধারণত কাঁচা খেজুরের রসে মিষ্টি নামক প্রাকৃতিক সুগার থাকে। যা আমাদের শরীরে ধীরগতিতে শোধিত হয়। আর এর ফলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে।

    শরীরে ক্লান্তি দূর করতে: খেজুরের রসের প্রচুর পরিমাণ সোডিয়াম ও পটাশিয়াম রয়েছে। খেজুরের রস বা খেজুরের গুড় আমাদের পেশিকে সুগঠিত করতে এবং শক্তিশালী করতে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও খেজুরের রস বা খেজুরের গুড় নিয়মিত খেলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয়।

    প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংক:  খেজুরের রসে রয়েছে ১৫ থেকে ২০% দ্রবীভূত শর্করা। এছাড়াও খেজুরের রসে প্রোটিন, ফ্যাট, মিনারেল, খনিজ ইত্যাদি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। এতে গুণ সম্পন্ন জলীয় অংশ বেশি হওয়ার কারণে খেজুরের রসকে প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংক বলা হয়।

    আরও পড়ুন: গরমে ত্বক উজ্জ্বল রাখার ঘরোয়া উপায়- গরমে ত্বকের যত্ন 

    হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি: গবেষণায় দেখা গিয়েছে খেজুরের রস দিয়ে তৈরি গুড়ে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও লৌহ থাকে। এর ফলে শীতকালে খেজুরের রসের গুড় বা খেজুরের রস খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক থাকে।

    রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: খেজুরের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল ও ভিটামিন গুণ সমৃদ্ধ উপাদান। যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে সর্দি-কাশির হাত থেকেও বাঁচাতে সাহায্য করে।

    উচ্চ রক্তচাপ কমাতে: খেজুরের রসে থাকা সোডিয়াম আমাদের শরীরের নাইট্রিক এসিড এর মাত্রা ব্যালেন্স করে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়াও খেজুরের রসে থাকা পটাশিয়াম শরীরের রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

    অস্থিরতা দূর কারক: খেজুরের রসে থাকা ম্যাগনেসিয়াম আমাদের শরীরের অস্থিরতা বিঘ্নতা ও ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। 

    কোষের ক্ষতি কমাতে: খেজুরের রসে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আমাদের শরীরের ক্ষতিকর টক্সিনকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক। আর এই টক্সিন আমাদের দেহের কোষের ক্ষতি করতে পারে এবং ক্যান্সারের বিকাশ ঘটাতে পারে না।

    খেজুরের রসের পুষ্টিগুণ

    শীতকালে কাঁচা খেজুরের রস খেতে অনেকেই পছন্দ করেন। কেউ আবার কাঁচা খেজুরের রসকে প্রক্রিয়াজাতক করে পিঠা, গুড়, পায়েস ইত্যাদি তৈরি করে থাকেন। খেজুরের রসে প্রচুর পরিমাণে এনার্জি শক্তি রয়েছে। খেজুরের রসে জলীয় অংশ বেশি, তাই খেজুরের রসকে প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংকসও বলা হয়। খেজুরের রসে গ্লুকোজ এর পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এছাড়াও খেজুরের রসে প্রচুর পরিমাণ খনিজ ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ উপাদান রয়েছে, খেজুরের রসে ১৫ থেকে ২০% দ্রবীভূত শর্করা রয়েছে। 

    খেজুরের রস আমাদের শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে মনে শান্তি এনে দিতে খুবই উপকারী। এছাড়াও খেজুরের রসের গুড় তৈরি করে খেলে অনিদ্রা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাধারণত খেজুরের গুড়ে আয়রন ও লৌহ বেশি থাকে, এবং হিমোগ্লোবিন তৈরিতেও সাহায্য করে। খেজুরের গুড়ে প্রোটিন, মিনারেল, ফ্যাট, ইত্যাদি সবই রয়েছে। তবে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের খেজুরের রস এবং খেজুরের গুড় পরিহার করে চলাই ভালো।

    খেজুরের রস খাওয়ার নিয়ম

    শীতকালে খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতা অনেক। তবে খেজুরের রস খাওয়ার নিয়ম আমরা সকলে সঠিকভাবে জানি না। চলুন তাহলে আজকের এই পোস্টে খেজুরের রস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে নেওয়া যাক।

    • খেজুরের রস খাওয়ার সঠিক নিয়ম হলো ভোরবেলা। কারণ সারারাত খেজুরের রস জমে থাকে, আর এই রসটা সকাল সকাল খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
    • তবে বেলা করে খেজুরের রস খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। কারণ তখন গাজন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এছাড়াও রসে অম্লতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
    • দেরি করে খেজুরের রস খেলে বমি বা পেট খারাপের সমস্যা হতে পারে।
    • সাধারণত খেজুরের রস ভোরবেলায় খাওয়া উত্তম। কারণ সারারাত জমে থাকা খেজুরের রসে কোন পাখি অথবা অন্যান্য পোকামাকড় মুখ দেয় না। তবে সাবধানতা অবলম্বন করা আমাদের সকলের উচিত।

    খেজুরের রসের অপকারিতা

    এতক্ষণ আপনারা নিশ্চয়ই খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে গেছেন। তবে খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতা যেমন রয়েছে, তেমনি এর কিছু অপকারিতা রয়েছে। চলুন তাহলে খেজুরের রসের অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

    খেজুরের রসে প্রচুর পরিমাণে খনিজ ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ উপাদান রয়েছে। এতে রয়েছে ১৫ থেকে ২০% দ্রবীভূত শর্করা। এছাড়াও খেজুরের গুড় আখের গুড়ের চেয়েও বেশি মিষ্টি এবং পুষ্টিকর ও খেতেও সুস্বাদু। খেজুরের গুড়ে রয়েছে প্রোটিন, মিনারেল, ফ্যাট, ইত্যাদি। খেজুরের রসে কোন ধরনের পোকামাকড় বা পাখি মুখ দিলে সেই খেজুরের রস খাবেন না। এতে করে আপনার নানা ধরনের রোগ হতে পারে। এছাড়াও যেহেতু খোলা অবস্থায় খেজুরের রস গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়, তাই এতে জীবাণুও থাকতে পারে। তাই খেজুরের রস কাঁচা অবস্থাতে না খাওয়াই উত্তম। 

    তবে কারো যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে খেজুরের রস থেকে বিরত থাকুন। কিন্তু খেজুরের রসের অপকারিতার চাইতে উপকারিতা অনেক বেশি। এছাড়াও খেজুরের রসে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।

    কাঁচা খেজুরের রস খেলে কি হয়

    শীতকালে কাঁচা খেজুরের রস খেতে ভালবাসে না এমন লোক হয়তো খুঁজে পাওয়া মুশকিল। খেজুরের রস একটি সুস্বাদু মিষ্টি ও পুষ্টিকর পানিও খাবার। তবে খেজুরের রসে নানা গুণ থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় এটি বিপদ ডেকে আনতে পারে। আর এই বিপদের মধ্যে অন্যতম ভাইরাস হচ্ছে নিপা ভাইরাস। বাংলাদেশ ২০১৮ সালের হিসেবে অনুসারে ৩১ টি জেলাতে এই ভাইরাসের আক্রমণ দেখা গিয়েছে। সাধারণত শীতকালে এই নিপা ভাইরাসের আক্রমণ বেড়ে যায়। পাখির খাওয়া ফলমূল বা রস এবং পাখির মলমূত্র এর কারণে নিপা ভাইরাসের সৃষ্টি হয়। 

    তাই আমাদের কাঁচা খেজুরের রস ও পশু পাখির খাওয়া ফলমূল থেকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্রয়োজনে কাঁচা খেজুরের রস ফুটিয়ে খেতে হবে। এছাড়াও জাল বা মশারি গাছে ব্যবহার করতে হবে। যাতে করে কোন ধরনের প্রাণী যেমন বাদুর ও পশু পাখি কোন প্রাণী খেজুরের রস খেতে না পারে। তবে আপনি সাবধানতা অবলম্বন করে কাঁচা খেজুরের রস খেতে পারেন।

    খেজুরের রস দিয়ে তৈরি খাবার

    শীতকাল চলে আসলে বিভিন্ন ধরনের পিঠা পুলির ধুম পড়ে যায়। এছাড়াও শীতকালে চারিদিকে শীতের আমেজ মৌ মৌ করে, আর শীতকালে খেজুরের রস ছাড়া যেন শীত একেবারে অসম্পূর্ণ। আপনারা অনেকেই খেজুরের রস দিয়ে তৈরি খাবার সম্পর্কে জানেন না। খেজুরের রস দিয়ে তৈরি হয় গুড়, যা আমরা বিভিন্ন ধরনের পিঠে পুলিতে ব্যবহার করে থাকি। তেমনি কিছু বিশেষ ধরনের পিঠা রয়েছে যেগুলো খেজুরের গুড় ছাড়া অসম্ভব। চলুন তাহলে সে পিঠাগুলোর নাম জানা যাক।

    আরও পড়ুন: নাকের ফাংগাল ইনফেকশন-নাকের রোগ সমূহ

    • খেজুরের রসের ক্ষীর
    • খেজুরের রসের পায়েস
    • রস চিতই
    • বিবিখানা পিঠা
    • টইটম্বুর রসে চুটকি

    শেষ কথা

    শীতকালে খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতা ও খেজুরের রসের পুষ্টিগুণ এই পোস্টটি আপনারা নিশ্চয়ই সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। এই পোস্টটি পড়ার পর আপনারা নিশ্চয়ই শীতকালে খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতা ও খেজুরের রসের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পেরেছেন। শীতকালে খেজুরের রস গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে সকলেরই পছন্দের একটি খাবার হিসাবে বিবেচিত। এছাড়াও খেজুরের রস দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পিঠাপুলি শীতকালে বানানো হয়ে থাকে। সুতরাং বলা যায় যে শীতকালে খেজুরের রসের উপকারিতা অনেক। আসুন তাহলে শীতকালের নিয়ম মেনে খেজুরের রস খাই এবং সুস্থ থাকি।

    আশা করছি আপনারা এই আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হবেন। এই আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। এ ধরনের আরও আর্টিকেল পড়তে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন ভিজিট করুন। এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    শাকিল বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url