জন্ডিসের লক্ষণ কি - জন্ডিস হলে কি করবেন তা সম্পর্কে জানুন
জন্ডিস হলে কি করবেন, জন্ডিসের ওষুধের নাম এবং জন্ডিসের লক্ষণ এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনাদেরকে আজকে বিস্তারিত জানানো হবে। আপনারা যারা আমাদের এই আর্টিকেল পড়ছেন। তারা নিশ্চয়ই জন্ডিসের ওষুধের নাম এবং জন্ডিসের লক্ষণ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে চেয়ে গুগলে সার্চ করে আমাদের এই আর্টিকেলটি ওপেন করেছেন। আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে জন্ডিস হলে কি করবেন, জন্ডিসের ওষুধের নাম এবং জন্ডিসের লক্ষণ এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
তাহলে চলুন বেশি দেরি না করে জন্ডিস হলে কি করবেন, জন্ডিসের ওষুধের নাম এবং জন্ডিসের লক্ষণ এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। এটা জানার জন্য আপনাকে অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
সূচিপত্র: জন্ডিস হলে কি করবেন- জন্ডিসের ঔষধের নাম এবং জন্ডিসের লক্ষণ
- ভূমিকা
- জন্ডিস হলে কি করবেন
- জন্ডিসের ঔষধের নাম
- জন্ডিসের লক্ষণ
- জন্ডিস প্রতিরোধে করণীয়
- জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা হয়
- জন্ডিস হলে কি খেতে হয়
- জন্ডিস হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে না
- উপসংহার
ভূমিকা
পৃথিবীর ভেতর জন্ডিস নতুন কোন রোগ নয়। এ রোগের কারণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। গরম এলেই বেড়ে যায় হেপাটাইটিস এ, এর প্রভাব, যাকে আমরা সাধারণত জন্ডিস বলে বেশি চিনি। তাই খাবার খাওয়া ক্ষেত্রে সবচেয়ে সাবধান থাকা খুবই জরুরী। কারণ পানি বা খাবার থেকে এ ধরনের রোগ ছড়াতে পারে। শুধু প্রাপ্তবয়স্কদেরই নয় সদ্যজাতদের মধ্যেও জন্ডিসের প্রবণতা দেখা যায়। শিশুদের ক্ষেত্রে শরীরে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে জন্ডিস দেখা যায়। এই ক্ষেত্রে সব ধরনের বয়সী লোকেদের কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি। আসুন তাহলে বেশি দেরি না করে জন্ডিস হলে কি করবেন, জন্ডিসের ওষুধের নাম এবং জন্ডিসের লক্ষণ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া যাক।
জন্ডিস হলে কি করবেন
আসলে জন্ডিস নিজে কোন রোগ নয়। বরঞ্চ এটি রোগের লক্ষণ। সাধারণত জন্ডিসহ নানা কারণে হতে পারে। জন্ডিস বলতে লিভারের প্রদাহজনিত জন্ডিসকে বোঝানো হয়। ভাইরাস ও ওষুধ থেকে শুরু করে নানা ধরনের অ্যালকোহল ইত্যাদির কারণে লিভারে প্রদাহ হতে পারে। আমাদের দেশে লিভার প্রদাহের প্রধান কারণ হলো, হেপাটাইটিস ই, এ, এবং ভাইরাস বি। এর মধ্যে প্রধান দুটি কারণ হলো, পানি ও খাদ্য বাহিত। এছাড়াও তৃতীয় কারণ হলো মূলত রক্তের মাধ্যমে হেপাটাইটিস এ ভাইরাস প্রধানত শিশুদের জন্ডিসের কারণ হতে পারে। তবে যে কোন বয়সের মানুষ হেপাটাইটিস ই, ও বি ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।
আরও পড়ুন: নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
এই বিষয়ে মেডিকেলের ডাক্তাররা বলেন যে, প্রসাবের রং চোখ ও ত্বক হলদে দেখালে জন্ডিস হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়। সাধারণত অনেক কারণেই জন্ডিস হতে পারে। তাই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে জন্ডিসের কারণ জটিলতা, মাত্রা ইত্যাদি জেনে নেওয়া উচিত। আর জন্ডিসের রোগীদের তাদের খাওয়া দাওয়ারের ব্যাপারে খুবই সতর্কতা থাকতে হবে। জন্ডিসের রোগীদের কি খেতে হবে, আর কি খাওয়া যাবেনা এ নিয়ে পরামর্শের শেষ থাকে না। কারণ জন্ডিস রোগীর ব্যাপারে প্রচলিত বিশ্বাস অনেক ক্ষেত্রেই আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গে মিলে না।
জন্ডিস হলে সব সময় বিশুদ্ধ খাদ্য ও পানি পান করতে হবে। শরীরের রক্ত নেওয়ার দরকার হলে অবশ্যই স্ক্যানিং করে রক্ত নিতে হবে। ডিসপোজিবল সিরিঞ্জ ব্যবহার করা খুব জরুরি। বিশেষ করে হেপাটাইটিস বি, এর টিকা প্রত্যেকেরই নেওয়া উচিত। তাই সুস্থ থাকতে আগে টিকা নিতে হবে।হেপাটাইটিস বি এর ক্ষেত্রে প্রথম মাসে একটি দ্বিতীয় মাসে একটি বা ছয় মাসের মধ্যে একটি ডোজ নেওয়া উচিত। হেপাটাইটিস এ, এর ক্ষেত্রে একটি ডোজি যথেষ্ট। আর দুই ক্ষেত্রে পাঁচ বছর পর পর বুস্টার টিকা নেওয়া উচিত।
জন্ডিসের ঔষধের নাম
জন্ডিস যেহেতু কোন রোগ নয়। তাই এর কোন ওষুধ নেই। ৭ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে গেলে, এই জন্ডিস এমনিতেই কমে যায়। আর এই সময় কোন ধরনের ব্যথার ওষুধ যেমন- প্যারাসিটামল, এসপেরিন, ঘুমের ওষুধ সহ আরো অন্যান্য কোন প্রয়োজনীয় ও কবিরাজ ওষুধ খাওয়া একদম উচিত নয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ সেবন করা ঠিক নয়।এতে হিতে বিপরীত হওয়ার ঝুঁকিটা বেশি থাকে। তবে এই ডিজিটাল যুগে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা গবেষণা করে কিছু জন্ডিসের ওষুধ বের করেছে। এই জন্ডিসের ওষুধের নাম হলো।
- bioliv capsule
- omidon tablet
- avolac syrup
- solvit b syrup
জন্ডিসের লক্ষণ
জন্ডিস একটি পানিবাহিত রোগ। এই জন্ডিস রোগের অনেকগুলো লক্ষণ আছে। যেগুলো আপনি জানলে খুব সহজেই জন্ডিস রোগকে শনাক্ত করতে পারবেন। এছাড়াও আপনার মধ্যে যদি এসব কোন লক্ষণ থাকে। তাহলে আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন, যে আপনার জন্ডিস হয়েছে কিনা। চলুন তাহলে জন্ডিসের লক্ষণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যায়।
- প্রথমত প্রসাব হলুদ হবে।
- বমি বমি ভাব হবে।
- খাবারে অরুচি হবে।
- জ্বর জ্বর অনুভূতি কিংবা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে।
- চোখ হলুদ হয়ে যাবে।
- শরীর হলুদ হতে পারে।
- শারীরিক দুর্বলতা থাকতে পারে।
- পায়খানা সাদা হতে পারে।
- তীব্র পেট ব্যথা হতে পারে।
- এছাড়াও কারো কারো আবার চুলকানি হতে পারে।
জন্ডিস প্রতিরোধে করণীয়
জন্ডিস মূলত একটি পানিবাহিত রোগ। আর এই জন্ডিস প্রতিরোধে আমাদের করণীয় কি কি তা সম্পর্কে নিজে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
- সব সময় ডিসপোজিবল সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে।
- অবশ্যই প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং করে রক্ত নিতে হবে।
- নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ থেকে সবসময় বিরত থাকতে হবে।
- হেপাটাইটিস এর ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে অবশ্যই।
- জন্ডিস শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়। তার জন্য জন্ডিস আক্রান্ত ব্যক্তির নিকট থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে।
- কোনরকম সংক্রমণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারদের পরামর্শ নেওয়া।
- নিরাপদ যৌন মিলন নিশ্চিত করতে হবে।
- কল কারখানা থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থ থেকে অনেক দূরে থাকতে হবে।
- সেলুনে সেভ করার সময় সব সময় নতুন ব্লেড ব্যবহার করতে হবে।
- এছাড়াও সব সময় বিশুদ্ধ খাবার ও পানি পান করতে হবে।
জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা হয়
জন্ডিস হলে সাধারণত চোখ ও প্রস্রাবের রং হলদে হয়ে যায়। ত্বক বা মুখের ভেতরেও হলুদ হয়ে যায়।এছাড়াও আরো নানারকম সমস্যা হতে পারে। যেমন- মুখে অরুচি ভাব, বমি বমি ভাব, জ্বর জ্বর ভাব, কখনো কখনো পেট ব্যথা হতে পারে। আবার কখনো কখনো চুলকানিও হতে পারে। এমনটা হলে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা এবং লিভারের এনজাইমগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেই জন্ডিস হয়েছে কিনা বোঝা যায়। তবে এই জন্ডিসের কারণ কি তা জানার জন্য, আপনাকে অবশ্যই ভাইরাস পরীক্ষা করতে হবে।
জন্ডিস হলে কি খেতে হয়
যাদের জন্ডিস রয়েছে তারা অবশ্যই খাবারগুলো সতর্কতার সাথে খেতে হবে। এবং খাবারের তালিকায় নানা রকম শাকসবজি থাকতে হবে। জন্ডিস হলে কি কি খেতে হবে, তা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।
- প্রোটিন: জন্ডিস হওয়ার রোগীদের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন মাছ, মাংস, মুরগির মাংস, এবং ডাল পরিমাণ মতো থাকতে হবে। তা না হলে জন্ডিসের আক্রান্ত রোগী দুর্বল হয়ে পড়বে। আবার অনেকেই মনে করে জন্ডিসের আক্রান্ত রোগী মাছ-মাংস জাতীয় খাবার খেতে পারবে না। কিন্তু এটা আসলে তাদের ভুল ধারণা।
- গোটা শস্য: কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা পূরণে রুটি, বাদামি চাল, ওটস খেতে পারেন। গোটা শস্যতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ ভিটামিন থাকে। যা আপনার শরীরের ক্ষতিকর টক্সিনকে বের করে দেয়।
- অ্যান্টি- অক্সিডেন্টযুক্ত খাবার: লেবুর শরবত বা বাতাবি লেবুর শরবত জন্ডিস রোগীর জন্য খুবই ভালো। এগুলো শরীরের পানির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।এছাড়াও প্রতিদিন বাদাম পরিমাণ মতো খেতে পারেন। আবার সামান্য আদা কুচি বা রসুন কুচি আদার রস বা আদা চা এগুলো দিনে দুই একবার খাওয়া যেতে পারে। এগুলো যকৃতের জন্য ভালো।
- সবজি: টমেটো, ফুলকপি, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু, গাজর, বাঁধাকপি, ও পালং শাক এগুলো জন্ডিস রোগীর জন্য খুবই ভালো।
- ফল: আনারস, তরমুজ, পাকা আম, পেঁপে, কলা, কমলা, জলপাই, আঙ্গুরের মতো ফল, এগুলো একজন জন্ডিস রোগীর প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাকতে হবে।
- পানি: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে হবে। প্রতিদিন প্রায় আট গ্লাস পানি পান করতে হবে। তবে অতিরিক্ত পানি খাওয়ার প্রয়োজন নেই। পানি আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দেয়। ডাবের পানি ও আখের রস শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করে থাকে।
জন্ডিস হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে না
- জন্ডিস হলে চিনি বা অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না।
- কাঁচা লবণ খাওয়া যাবে না।
- অতিরিক্ত তেল মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।
- অ্যালকোহল যুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।
- ফ্যাট ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক আশা করি পুরো আর্টিকেলটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। এই পোস্ট থেকে আপনি আশা করি জন্ডিস হলে কি করবেন, জন্ডিসের ওষুধের নাম এবং জন্ডিসের লক্ষণ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন। এই আলোচনা থেকে আরও জানতে পেরেছেন জন্ডিস প্রতিরোধে করণীয়, জন্ডিস হলে কি কি সমস্যা হয়, জন্ডিস হলে কি খেতে হয়, জন্ডিস হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে না, ইত্যাদি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আজকের এই আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আমাদের ওয়েবসাইটে এ ধরনের সুন্দর সুন্দর ব্লক পোস্ট করা হয়। আপনার সুস্থতা কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
শাকিল বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url