কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা | দিনে কয়টি কলা খাওয়া উচিত
সাধারণ কলা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় একটি ফল। কলাতে রয়েছে পুষ্টি ভিটামিন, এবং খনিজ ,পদার্থে পূর্ণ যা আপনার শরীরকে সুস্থসবল রাখতে সাহায্য করে। তবে যে কোন খাবারের মতো অনেক বেশি কলা খাওয়ার ফলেও অসুস্থ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কলা একটি বহুমুখী ফল। যা সারা বিশ্বের মানুষের খাদ্যের প্রধান হয়ে উঠেছে। এখন চলুন কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
কলা হলো একটি পুষ্টির শক্তি। যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ও খনিজ, ফাইবার। যা আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আপনারা যারা কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান। তারা আমার এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
সূচিপত্র: কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা- সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
- ভূমিকা
- কলা খাওয়ার উপকারিতা
- কলা খাওয়ার অপকারিতা
- সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা
- রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
- কলার ক্ষতিকর দিক
- দিনে কয়টি কলা খাওয়া উচিত
- উপসংহার
ভূমিকা
কলা আমাদের অতি পরিচিত একটি ফল। কলার সুলভ মূল্যের কারণে সকলের কাছে এটি গ্রহণযোগ্য ফল। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের স্বাস্থ্য রক্ষায় কলার ভূমিকা অপরিসীম। কারণ এই কলা আমাদেরকে বিভিন্ন রোগ নিরাময় থেকে রক্ষা করে থাকে। যেমন- ত্বক ও চোখ, দাঁত, পা, চুল, ইত্যাদির যত্নেও এই ফলটির ব্যবহৃত হচ্ছে। সাধারণত এই কলা কাঁচা অবস্থায় সবুজ হয়ে থাকে। এবং পাকা অবস্থায় এটি হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
বাংলাদেশ সহ ভারত ও ভারতীয় মহাদেশে কলার জনপ্রিয় অনেক জাত রয়েছে। যেমন- সাগর কলা, আনাজি কলা, সবরি কলা, চাপা কলা, এবং বিচি কলা। এসব কলার জাত আলাদা হলেও স্বাদ প্রায় একই রকম। কিন্তু সব জাতের কলাতেই কিছু উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। চলুন কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
কলা খাওয়ার উপকারিতা
সাধারণত সকল প্রকার ফলমূল আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কলা হলো সকল ফলের মধ্যে খুবই পরিচিত ও সহজলভ্য ফল। এ কলার অনেক উপকারিতা রয়েছে যেমন-
- কলা আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। কেননা কলাতে ক্যালোরি কম এবং ফাইবার বেশি যা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে।
- কলা রক্তচাপ কমায়। কেননা কলাই থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
- কলা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কেননা কলাতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা কিছু ধরনের ক্যান্সার থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে থাকে।
- কলা পটাশিয়ামের একটি ভালো উৎস যা আপনার হার্টকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করতে পারে।
- কলায় প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম রয়েছে। যা আপনার দেহের হাড়কে অনেক শক্ত করে।
- কলাতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকে। যা মানব দেহে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে।
- চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় ভিটামিন এ, অনেক সাহায্য করে যা সহজলভ্য ফল। কলাতে প্রচুর পরিমাণে উপস্থিত থাকে।
- দাঁতের যত্নে কলা অনেক উপকারী। কারণ কলায় বিদ্যমান শক্তিশালী উপাদান সমূহ দাঁতের যত্নে অনেক সহায়তা করে। এবং দাঁতকে শক্তিশালী করে তুলে। আবার দাঁতকে হলদে ভাব থেকে রক্ষা করে থাকে।
- আবার গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় কলা অনেক সাহায্য করে। কলাই ভিটামিন সি, ও ভিটামিন ১২, থাকে। যা রক্ত রক্তস্বল্পতা কমাতে সাহায্য করে।
কলা খাওয়ার অপকারিতা
কলার শুধু উপকারিতা রয়েছে তা নয়। কলা খাওয়ার অপকারিতাও রয়েছে অনেক। আর আমাদের দেহের সুস্থতা রক্ষায় কলার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই জানা খুব জরুরী। কিন্তু উপকারিতার তুলনায় অপকারিতার মাত্রা খুব কম, হলেও দেহের জন্য ক্ষতিকর একটি প্রভাব ফেলতে পারে। তার জন্য অপকারিতার কথা মাথায় রেখে আমাদেরকে কলা খেতে হবে। কলা খাওয়ার উপকারিতা গুলো হলো-
- অতিরিক্ত কলা খেলে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম এর ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে যায়। যে কারণে হার্ট অ্যাটাকের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও পটাশিয়ামের উচ্চমাত্রার কারণে কিডনি জটিলতা, পেশির খিচুনি, হৃদপিন্ডের সমস্যা, এবং মাথা ঘোরা এগুলো অনিয়মিত হওয়ার মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তাই বেশি বেশি কলা খাওয়ার ব্যাপারে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে।
- সাধারণত ডায়াবেটিসের জন্য কলা উপকারী হলেও অতিরিক্ত কলা খাওয়া উচিত নয়। কারণ এতে এতে বিপরীত হতে পারে।
- কখনোই খালি পেটে কলা খাওয়া উচিত নয়। কেননা এসিড বৈশিষ্ট্যের কারণে খালি পেটে কলা খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
- আবার যাদের খুব বেশি ঠান্ডার সমস্যা আছে। তাদের জন্য কলা এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম। কেননা কলা ঠান্ডা কে প্রভাবিত করে।
এছাড়াও আরো অনেক অপকারিতা রয়েছে কলার। তবে এসব হলো কলা অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে। তাই আপনারা মাথায় রাখবেন যে খালি পেটে কলা খাওয়া যাবেনা। আবার বেশি পরিমাণে কলা খাওয়া যাবে না। এগুলো থেকে বিরত থাকতে পারলেই আপনি কলা থেকে উপকার পাবেন।
সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা
কলা একটি পুষ্টিকর ফল। যা নিয়মিত খেলে আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। সাধারণত সকালে কলা খাওয়ার কিছু উপকারিতা রয়েছে। সেগুলো নিচে দেয়া হলো- আপনারা সবাই মনোযোগ সহকারে পড়ে নিবেন।
আরও পড়ুন: তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- কলায় থাকা প্রাকৃতিক শর্করা আপনার শরীরের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এবং আপনাকে দিনের বেলায় সতর্কবোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
- কলাই ফাইবার রয়েছে যা আপনার হজমের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এবং অস্ত্রের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে।
- বলাই খাদ্যতালিকাগত পটাশিয়ামের একটি ভালো উৎস থাকে। যা কার্ডিওভাস্কুলার স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য একটি অপরিহার্য পুষ্টি।
- সাধারণত কলায় ভিটামিন, ভিটামিন সি, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন৬, ম্যাগনেসিয়াম সহ খনিজগুলির একটি ভালো উপাদান রয়েছে।
- স্বাস্থ্যকর সকালের নাস্তার অংশ হিসেবে কলা অন্তর্ভুক্ত রাখতে হবে। আপনাকে আপনার প্রতিদিনের সমস্ত ফল এবং শাকসবজি মধ্যে এই কলা রাখা উচিত। কেননা কলাতে রয়েছে অনেক ভিটামিন ও পুষ্টি। যা আপনার শরীরকে নানা ধরনের রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
আমরা অনেকেই আছি যারা ঠান্ডা লাগার ভয়ে রাতের বেলা কলা খায় না। কিন্তু অনেকেই জানে না যে রাতে কলা খাওয়ার উপকারিত রয়েছে। যদি আপনাদের কারো ঠাণ্ডা জনিত সমস্যা না থাকে। তাহলে প্রতিদিন রাতের বেলায় ঘুমানোর আগে একটি করে কলা খেলে বেশ কয়েকটি শারীরিক উপকার পাবেন। যেমন-
- আপনারা যারা মানসিক চাপে আছেন। তাদের জন্য মানসিক চাপ দূর করতে রাতের বেলা কলা এবং পিনাট বাটার খাওয়া উচিত। কেননা কলা ও পিনাট বাটার আপনাকে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে সাহায্য করবে। যেটি আপনাকে মেন্টালি ফ্রেশ রাখবে।
- কখনো যদি রাত্রে বেলা বাহিরের খাবার এবং বাহিরের ভাজাপোড়া খাবার বেশি খাওয়া হয়ে যায়। তখন এটি আমাদের শরীরে এসিডিটি তৈরি করে। এমন পরিস্থিতিতে যদি পরেন তাহলে আপনি রাতে ঘুমানোর আগে একটি কলা খেয়ে নেবেন। তাহলে এটি আপনার পেটের এসিডিটিকে কমাতে সাহায্য করবে।
- আবার রাত্রিবেলায় ঘুমানোর আগে যদি কলা খেয়ে ঘুমান। তাহলে উচ্চ রক্তচাপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ থাকে।
যাদের কয়েকটি সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য রাতের বেলা কলা খাওয়া একেবারে উচিত নয়:
- হাঁপানি এবং শ্বাসকষ্টের রোগীদের রাতের বেলা কলা খাওয়া একদমই যাবে না। যাদের একটুতেই ঠান্ডা লেগে যায়, বা একটুতে সর্দি কাশি লেগে যায়। তাদের রাতের বেলা কলা খাওয়া যাবে না।
- যারা রাত্রিবেলায় বিভিন্ন কাজ করেন, তাদের কলা না খাওয়াই ভালো। কারণ কলা ঘুম আসতে সাহায্য করে।
- আপনারা যারা ওজন কমাতে চান। তাহলে তাদের জন্য রাত্রিবেলা কলা না খাওয়াই ভালো। কারণ রাত্রিবেলা কলা খেলে শরীরের ওজন বেড়ে যায়।
কলার ক্ষতিকর দিক
- সাধারণত পাকা কলাতে ট্রিপটোফ্যান আমাইনো এসিড থাকে। এই আমাইনো এসিডের প্রভাবে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। এবং দেহে ক্লান্তি আসে ও সব সময় ঘুম পায়।
দাঁতের ক্ষয়:
- কলাই প্রচুর পরিমাণে শর্করা থাকায়, বেশি খেলে দাঁতের ক্ষতি হয়। এমনকি দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য কলা চকলেটের থেকেও বেশি ক্ষতিকর।
- সাধারণত মাঝারি মাপের একটি পাকা কলায় ১০৫ ক্যালোরি শক্তি থাকে। এর জন্য বেশি কলা খেলে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা প্রবল থাকে।
- আপনাদের কারো যদি মাইগ্রেনের সমস্যা হয়ে থাকে। তাহলে তাদের যতটা সম্ভব কলা থেকে দূরে থাকতে হবে। কেননা কলায় টাইরামাইন নামে এক ধরনের উপাদান থাকে, যা কলায় মাইগ্রেনের কারণ হয়ে থাকে।
হাইপারক্যালেমিয়া:
- রক্তে যদি পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়, তাহলে এই রোগ হয়। এই রোগে আক্রান্তরা সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। হৃদপিন্ডের সমস্যা অনিয়মিত হতে থাকে। কলায় বেশি পরিমাণে পটাশিয়াম থাকার কারণে কলা যদি বেশি খাওয়া হয়। তাহলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
নার্ভ:
- কলাতে ভিটামিন বি ৬, এর পরিমাণ বেশি থাকে। এর ফলে স্তন্যতন্ত্রের ক্ষতি হয়ে থাকে। কলায় এই ভিটামিন অধিক পরিমাণে আছে। তাই খুব বেশি কলা খাওয়া উচিত নয়।
শ্বাস নিতে সমস্যা:
- আপনাদের যাদের শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা আছে। তারা যদি বেশি মাত্রায় কলা খেয়ে ফেলেন, তাহলে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা হতে পারে।
এলার্জি:
- কলাতে অনেক সময় এলার্জি হয়ে থাকে। এর ফলে ঠোট ফুলে যায়, এবং গলা জ্বালা করে।
পেট ব্যথা:
- সাধারণত বাজার থেকে আনা কলা বেশির ভাগই রাসায়নিকের সাহায্যে পাকানো হয়ে থাকে। তাছাড়াও কলায় শর্করা পরিমাণ খুব বেশি, এসবের জন্য পেট ব্যথা হতে পারে।
গ্যাস:
- কলাতে থাকা ফাইবারের কারণে গ্যাস সৃষ্টি হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য:
- কলা বৃহদন্ত্রের চলনে সাহায্য করে। তাই অতিরিক্ত বেশি পরিমাণে কলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ডায়াবেটিস:
- কলাতে সুগারের পরিমাণ অধিক মাত্রায় বেশি থাকার, কারণে কলা খেলে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা থাকে।
দিনে কয়টি কলা খাওয়া উচিত
সাধারণত কলা দিনে দুইটি করে খাওয়া উচিত। কারণ কলা ওজন কমাতে এবং বাড়াতে অনেক ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এটি নির্ভর করে খাওয়ার পরিমাণ এর ওপর, ইউএসডিএ গাইডলাইন অনুযায়ী প্রতিদিন আপনার দুই কাপ ফল খাওয়া উচিত। অর্থাৎ সেটার পরিমাণ দুটি বড় কলার সমান। সেই অনুযায়ী দৈনিক ২ টি করে কলা খাওয়া অবশ্যই নিরাপদ। তবে আপনি যদি ওজন কমাতে চান। তাহলে মাঝারি আকারের ৫ ইঞ্চি মাপের একটি কলা খাওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন: প্রতিদিন ডিম খাওয়ার উপকারিতা
এটি অবশ্যই আপনার শারীরিক পরিশ্রম করার আগে বা পরে খেতে হবে। তাহলে কলার বেশি উপকারিতা পাবেন। অবশ্য স্বাস্থ্যসম্মত প্রক্রিয়ায় ওজন কমাতে চাইলে কলা খাওয়া বাদ দেওয়া যাবে না। কিন্তু কলা খাওয়ার পরিমাণ একটু কমিয়ে দিতে হবে।
শাকিল বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url