ওসিডি রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয় - ওসিডি থেকে মুক্তির উপায় জেনে নিন
ওসিডি থেকে মুক্তির উপায় এবং ওসিডি রোগের ঔষধ কত দিন খেতে হয় এই সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষেরই সঠিক ধারণা নেই। আপনি কি জানেন ওসিডি থেকে মুক্তির উপায় কি এবং ওসিডি রোগের ওষুধ কতদিন খেতে হয় না জেনে থাকলে এই পোস্টটি শুধু আপনার জন্য। কেননা এই পোস্টে ওসিডি থেকে মুক্তির উপায় এবং ওসিডি রোগের ওষুধ কতদিন খেতে হয় এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
ওসিডি বা শুচিবাই হলো এক ধরনের মানসিক রোগ। এই মানসিক রোগ গুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান রোগ হলো ওসিডি বা শুচিবাই। অনেকেই এর চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত নন। তাহলে চলুন বেশি দেরি না করে ওসিডি থেকে মুক্তির উপায় এবং ওসিডি রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয় তা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। এটা জানার জন্য আপনাকে অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
সূচিপত্র: ওসিডি থেকে মুক্তির উপায়- ওসিডি রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয়
- ভূমিকা
- ওসিডি কি
- ওসিডি রোগের লক্ষণ
- ওসিডি থেকে মুক্তির উপায়
- ওসিডি রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি
- ওসিডি রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয়
- ওসিডি কি ভালো হয়
- কোন ওষুধ ওসিডি কমাতে সাহায্য করে
- আমাদের শেষ কথা
ভূমিকা
আজকের এই পোস্টে ওসিডি থেকে মুক্তির উপায় এবং ওসিডি রোগের ওষুধ কতদিন খেতে হয় এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। অনেকেই জানতে চান যে ওসিডি রোগের সমস্যা থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায় এবং ওসিডি রোগের ঔষধ কত দিন খেতে হবে সেই সম্পর্কে অনেকেরই কোন রকমের ধারণা নেই। এই রোগের সমস্যা নিয়ে তাই আজকে তাদের জন্য আমাদের এই আলোচনা। উন্নত মানের একটি রোগ মানসিক রোগীদের মধ্য এটি হচ্ছে ওসিডি রোগ বা শুচিবাই। অনেকের এ রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত নন এই রোগ নিয়ে। তাহলে চলুন ওসিডি থেকে মুক্তির উপায় এবং ওসিডি রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয় ও আরো নানা বিষয় পদ্ধতি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া যাক।
ওসিডি কি
ওসিডি এর পূর্ণরূপ হলো (obsessive compulsive disorder) যাকে বাংলায় শুচিবাই বলা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে অনেক বেশি সংখ্যক রোগী এই রোগে ভুগছেন। এই রোগে মনের ভেতরে একই চিন্তা বারবার আসতে থাকে। রোগী নিজেও বুঝে এটি অযৌক্তিক তারপরে ও সে এই চিন্তা নিবারণ করতে পারে না। আর এই পর্যায়ে রোগী হতাশ হয়ে পড়ে। সাধারণত ওসিডি রোগীরা চূড়ান্ত পর্যায়ের মানসিক রোগী। এই জন্য ওসিডি রোগীদের ওষুধ কতদিন খেতে হয়। এই বিষয় সম্পর্কে অবশ্যই আপনাদের জানা খুব প্রয়োজন।
ওসিডি রোগের লক্ষণ
সাধারণত ওসিডি রোগের লক্ষণগুলো বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেয়ে থাকে যেমন।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে অধিক সচেতন হয়ে বারবার মুছা ধোয়া থাকে।
- বারবার কাউকে আঘাত করতে চায়।
- সে যৌনতা নিয়ে নানা রকম চিন্তা করতে পারে।
- কোন জিনিস তার মনের মতো সাজাতে না পারলে অস্থিরতায় ভোগে।
- জীবাণু ও দূষণের ভয়ে বারবার হাত ধোয়া বা পরিষ্কার করা।
- নিজের বা অন্যের ক্ষতি হতে পারে এমন অহেতুক চিন্তা ভাবনা।
- এছাড়াও সে ধর্মীয়ভাবে হত্যা হয়ে আল্লাহর বিরুদ্ধে অশ্লীল চিন্তা করতে পারে। মূলত এগুলোই হল ওসিডি রোগের লক্ষণ।
ওসিডি থেকে মুক্তির উপায়
ওসিডি রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে রোগীর নিজেকেই সচেষ্ট হয়ে খুঁজে বের করতে হবে। ধর্মীয় ওসিডি থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে ওসিডি থেকে মুক্তির দোয়া করা যায়। তাহলে চলুন ওসিডি থেকে মুক্তির উপায় সমূহ কি কি তা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যায়।
আরও পড়ুন: সকালে ব্যায়াম করার ১০ টি উপকারিতা
- ওসিডি এবং ধর্মীয় ওসিডি থেকে মুক্তির দোয়া হিসেবে আপনারা বারবার এই দোয়াটি পাঠ করবেন। উচ্চারণ: (ইয়া- হাইয়ু ইয়া- কাইয়ুম বিরাহমাতিকা আছতাগীছা)।
- ওসিডি রোগ এটি যেহেতু একটি মানসিক সমস্যা তাই সর্বদা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।নিজেকে অন্য ১০ জনের মত স্বাভাবিক জীবনযাপনের মত কল্পনা করে তা অনুসরণ করতে হবে।
- অতিরিক্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা পরিহার করতে হবে। আল হাদিসে মানুষ হিসেবে যতটুকু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থাকার কথা বলা হয়েছে। ঠিক ততটুকুই আপনাকে অনুসরণ করতে হবে।
- শয়তানের ধোকায় পড়ে সাধারণত মানুষ একই কাজ বারবার করে। তাই ওসিডি থেকে মুক্তি লাভের জন্য অবশ্যই মহান আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে।
- এছাড়াও কেউ যদি ওসিডি থেকে মুক্তির পরামর্শ দেয়। তাহলে সেটা সাদরে গ্রহণ করতে হবে।তাদের মতামতকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ তারা আপনার ভালো চাইছে বলেই তারা এমনটা বলছে।
- ওসিডির জন্য অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে। আবার ওসিডি রোগের ওষুধ কতদিন খেতে হবে তা সম্পর্কে ডাক্তারের থেকে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। এবং তা আপনাকে যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
- সামাজিকভাবে রোগীকে বয়স অনুযায়ী ব্যস্ত রাখা খুবই জরুরী। এ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তাকে যত ব্যস্ত রাখা যাবে সে তত এ রোগ থেকে মুক্তি পাবে।
- উন্নত মানের মানসিক ডাক্তার দ্বারা সাইক্লোথেরাপির ব্যবস্থা করতে হবে। রোগীর চিন্তা ধারণা ত্রুটি শব্দ করা জরুরি। এছাড়াও চিকিৎসার পদ্ধতি এটি খুব কার্যকরী।
ওসিডি রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি
সাধারণত ওসিডি রোগীরা কিন্তু সব সময় মানসিক অস্থিরতায় ভোগে থাকে। বিভিন্ন কারণে একজন ব্যক্তির ওসিডি রোগ হয়ে থাকে। এর মধ্যেও প্রধান কারণ হলো বংশগত। পরিবেশগত এবং মস্তিষ্কের বিশেষ গঠনের কারণে ও এই ওসিডি রোগ সৃষ্টি হয়। তাহলে চলুন ওসিডি রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
- রোগীকে তার বয়স অনুযায়ী মানসিকভাবে ব্যস্ত রাখতে হবে। কারণ এই রোগী যত মানুষের মধ্যে থাকবে তত এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
- নিজের অস্বাভাবিকতা রোগীকে বারবার বোঝাতে হবে। দরকার হলে সেইগুলো রেকর্ড করে রোগীকে দেখাতে হবে। যাতে করে সে মানসিক ভাবের ব্যাপারটা বুঝতে পারে।
- রোগীকে ময়লা হাত দিয়ে হাত ধোঁয়া থেকে দূরে রাখার প্র্যাকটিস করতে হবে। রোগী যখন হাত ধোয়ার চেষ্টা করবে তখন তার হাতকে আটকে রাখতে হবে। যাতে করে রোগীর মানসিক অবস্থা পরিবর্তন হয়।
- এছাড়াও রোগীর চিন্তাধারার ত্রুটি সনাক্ত করে তাকে উন্নত মানসিক ডাক্তার দ্বারা সাইকোথেরাপির ব্যবস্থা করতে হবে। আর এটি হল একটি কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী (tca-clomipramive ssri fluoxetin sertalline flvuoxamin) ইত্যাদি এই ওষুধগুলো উঁচু ডজে রোগীকে দিতে হবে। কারণ এই প্রতিরোধে ওষুধ আস্তে আস্তে রোগীকে উচ্চ মাত্রায় না দিলে obession কখনোই কমবে না।
- ওসিডি রোগের ওষুধ কতদিন খেতে হয়, এই প্রশ্নের জবাব দেওয়া খুব কঠিন তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যতদিন রোগ পুরোপুরি ভালো না হয়, ততদিন এই ওষুধটি কন্টিনিউ করা ভালো।কারণ এই ওষুধটি যদি খাওয়া বাদ দেয়া হয়। তাহলে কিন্তু রোগী আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসতে পারে।
ওসিডি রোগের ঔষধ কতদিন খেতে হয়
ওসিডি রোগের জন্য আমাদের কতদিন পর্যন্ত ওষুধ খেতে হয়। সেই বিষয়টি একমাত্র ধাপে ধাপে সেই মানসিক রোগ নিয়ন্ত্রণকারী ডাক্তারের কাছে গেলে তিনি ভালোভাবে বুঝে বিষয়টি বলতে পারবেন। তাই আপনাদের মধ্যেও যদি এ ধরনের রোগী থেকে থাকে। তাহলে তাকে খুব দ্রুত মানসিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। সেই চিকিৎসক যে পরামর্শগুলি রোগীকে দেবে আর সেটি যদি অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয়। তাহলে এই ওসিডি রোগ খুব দ্রুত সেরে যাবে বলে আমি মনে করি। এছাড়াও যদি প্রাথমিকভাবে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়। তাহলে অল্প কিছু মধ্যেই এই ওসিডি রোগটি থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। আমরা এখন দেখব যে ওসিডি রোগের ওষুধ কতদিন খেতে হয়।
আরও পড়ুন: কবুতরের রোগ এবং ঔষধের নাম
আপনারা অবশ্যই এই বিষয়টি বুঝবেন যে রোগীর প্রকার আর মাত্রা ভেদ অনুযায়ী চিকিৎসক রোগীকে বিভিন্ন মেয়াদী ওষুধ দিতে থাকবেন। চিকিৎসক ওষুধ দেবেন আর খেয়াল করে দেখবেন যে রোগী কতটুকু সুস্থ হচ্ছে এবং সুস্থ হতে কেমন সময় লাগছে। তার জন্য এই ওষুধটি বিভিন্ন সময় পর্যন্ত রোগীকে খেতে হতে পারে। যেমন ধরুন বিষন্নতার ওষুধ সুস্থ হওয়ার পরও ৬ থেকে ১২ মাস খাওয়া লাগতে পারে। দুশ্চিন্তার ওষুধ ৩ থেকে ১২ মাস পর্যন্ত খাওয়া লাগতে পারে। এছাড়াও বড় মানসিক রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে এই ওষুধ ২ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত এই ওষুধ খাওয়া চলতে থাকে।
ওসিডি কি ভালো হয়
ওসিডি রোগের চিকিৎসার অংশ হিসেবে আপনারা ওসিডি রোগের ঔষধ কত দিন খেতে হয় তা সম্পর্কে অবশ্যই জেনেছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন ওসিডি কি ভাল হয়, সাধারণত ওসিডি রোগ সম্পূর্ণরূপে বা পুরোপুরি ভালো হয় না। কারণ হলো দীর্ঘদিন একটা রোগে আক্রান্ত থাকলে তা কাটিয়ে ওঠা বেজায় কঠিন হয়ে থাকে। এর কারণে ওসিডির চিকিৎসা পদ্ধতি তাই দীর্ঘমেয়াদী। তবে আপনি যদি বারবার ঔষধ পরিবর্তন ও নিজে থেকে পরিবর্তন হওয়ার চেষ্টা করে থাকেন। তাহলে অবশ্যই ওসিডি বা শুচিবায়ু রোগ থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
কোন ওষুধ ওসিডি কমাতে সাহায্য করে
- ভেনলাফ্যাক্সিন (Effexor)
- সিটালোপ্রাম (সেলেক্সা)
- এসকিটালোপ্রাম (লেক্সাপ্রো)
- ক্লোমিপ্রামিন (Anafranil)
- ফ্লুভোক্সামিন (Luvox)
আমাদের শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আপনি নিশ্চয়ই এই পোস্টটি পড়ে ওসিডি থেকে মুক্তির উপায়, ওসিডি রোগের ওষুধ কতদিন খেতে হয়, ওসিডি রোগের লক্ষণ, ওসিডি রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি, ওসিডি কি ইত্যাদি বিষয় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে গিয়েছেন। এই পোস্টটি আপনার উপকারে আসলে এখনি বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে ফেলুন। এছাড়াও আরো স্বাস্থ্য বিষয়ক চমকপ্রদ সব আর্টিকেল পড়তে চাইলে আমাদের সাথেই থাকুন। এই পোস্টটি পুরোটা পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
শাকিল বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url