নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ- যে কারণে নামাজ ভঙ্গ হয়
নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ আমরা অনেকেই জানিনা। কিন্তু একজন মুসলিম হিসেবে আমাদেরকে অবশ্যই নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে হবে। আজকে আমরা এই আর্টিকেলে নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আপনি যদি নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চান ।তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আমাদের সাথে থাকুন। চলুন তাহলে বেশি দেরি না করে নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ- যে কারণে নামাজ ভঙ্গ হয় এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। এটা জানার জন্য আপনাকে অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।
সূচিপত্র: নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ- যে কারণে নামাজ ভঙ্গ হয়
- ভূমিকা
- নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ
- যে কারণে নামাজ ভঙ্গ হয়
- নামাজ না হওয়ার কারণ
- নামাজ না পড়ার শাস্তি
- দুনিয়াতে যে শাস্তি দেওয়া হবে
- কবরে যে শাস্তি দেয়া হবে
- মৃত্যুর সময় যে শাস্তি দেয়া হবে
- কবর থেকে তোলার পর যে শাস্তি দেয়া হবে
- শেষ কথা
ভূমিকা
নামাজ মুমিনদের সবচেয়ে বড় ইবাদত। সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন ও প্রাপ্ত বয়স্ক প্রতিটি মুমিনদের ওপর নামাজ ফরজ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মুমিনদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। যে কোন জায়গায় যাওয়া হোক না কেন নামাজ কখনো ছেড়ে দেওয়া যায় না। সব সময় প্রত্যেক মুমিনকে নামাজ আদায় করতে হবে। নামাজ যেহেতু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তাই আমাদের কে নামাজে কিছু কাজ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে তা না হলে নামাজ কবুল হবে না। যেসব কারণে নামাজ কবুল হয় না এবং যে কারণে নামাজ ভঙ্গ হয় সেগুলো সম্পর্কে আমাদের সবার জানা উচিত। একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের এই বিষয়গুলো জানা অত্যন্ত প্রয়োজন।
নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ
আমরা অনেকে আছি যারা নামাজ পড়ি কিন্তু নামাজ কবুল হচ্ছে কিনা অথবা নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ আমাদের জানা থাকে না। আমরা যদি নামাজ কবুল না হওয়ার কারণগুলো ভালোভাবে জেনে নিতে পারি তাহলে অবশ্যই খুব সহজেই সঠিকভাবে নামাজ আদায় করে আল্লাহতালার কাছে আমাদের নামাজগুলো কবুল করতে পারব। আর সেই জন্যই আমাদের নামাজ কবুল না হওয়ার কারণ জানতে হবে। আসুন তাহলে আজ নামাজ কবুল না হওয়ার কারণগুলো জেনে নেই।
লোক দেখানো ইবাদত করা: আমাদের সমাজে অনেকে আছে যারা লোক দেখানো ইবাদত করে। যারা লোক দেখানো ইবাদত করে তাদের জন্য ভয়াবহ শাস্তি ও ধ্বংস। তারা ইহকালে ব্যর্থ এবং পরকালেও ব্যর্থ হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন দুর্ভোগে সেই সালাত আদায়কারীদের যারা তাদের সালাত সম্বন্ধে উদাসীন।
হারাম রুজি খেয়ে নামাজ আদায় করা: ইবাদত কবুলের অন্যতম একটি শর্ত হলো হালাল উপার্জনের নিজের জীবিকা নির্বাহ করা। হাদিসে বলা হয়েছে যে হালাল রিযিক খাবার খাওয়া একটি ফরজ। এই হালাল রুজি না খাওয়ার কারণে বান্দাদের নামাজ আল্লাহ তাআলার কাছে কবুল হয় না।
সুন্নত তরিকায় নামাজ আদায় না করা: ইবাদত করতে হলে আমাদেরকে সুন্নত তরিকায় ইবাদত করতে হবে। অর্থাৎ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রদর্শিত সম্মান অনুসরণ করে আমাদেরকে নামাজ আদায় করতে হবে। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন যেভাবে তোমরা আমাকে দেখেছ নামাজ আদায় করতে ঠিক সেভাবেই তোমরা নামাজ আদায় কর। সুন্নতি তাকিয়া নামাজ যদি না হয় তাহলে সেই নামাজ আল্লাহ তায়ালার কাছে কবুল হবে না।
আরও পড়ুন: নামাজ আদায় করার সঠিক নিয়ম
নামাজ আল্লাহর উদ্দেশ্যে না হওয়া: আমাদের নামাজ পড়ার প্রধান উদ্দেশ্য হল আল্লাহকে খুশি করা। অর্থাৎ নামাজ-আল্লাহতালার উদ্দেশ্যে আদায় করা। কারণ হলো সবকিছু ইবাদতের একমাত্র মালিক হলেন আল্লাহতালা। আমরা যদি অন্য কিছুর জন্য ইবাদত পালন করি তাহলে এটি আল্লাহতালার সাথে শরীক করা হবে। অনেকেই আছে যারা মানুষকে দেখানোর জন্য নামাজ আদায় করে থাকে মানুষ যেন তাদেরকে ভালো বলে যেন সমাজে মানুষের কাছে তারা সম্মান অর্জন করতে পারে সেই উদ্দেশ্যে তারা নামাজ আদায় করে থাকে। যদি নামাজ আল্লাহর উদ্দেশ্যে না হয় তাহলে সেই নামাজ কখনোই আল্লাহর কাছে কবুল হবে না।
যে কারণে নামাজ ভঙ্গ হয়
আমরা সকলেই জানি যে ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ হচ্ছে নামাজ ।প্রথমে আমাদেরকে ঈমান আনতে হবে এরপরে সঠিকভাবে নামাজ আদায় করতে হবে। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নামাজ। প্রত্যেক মুসলমানদের উপর নামাজ ফরজ। আমরা অনেকে আছি যারা নামাজ পড়ি কিন্তু অনেক সময় আমাদের নামাজ হয় না। নামাজ না জানার ফলে নামাজ কবুল হয় না। তাই চলুন যে যে কারণে নামাজ ভঙ্গ হয় সেই সম্পর্কে জেনে নেই।
- নামাজ পরাকালীন অবস্থায় এমন কোন কাজ করা যাবে না যা বাহির থেকে দেখলে মনে হয় লোকটি নামাজ পড়ছে কিনা। এমন কাজ করলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
- কেবলামুখী হয়ে নামাজ না পড়লে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
- নামাজের মধ্যে কোরআন দেখে দেখে পড়া বা অন্য কোন লেখা পড়লে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
- নামাজের মধ্যে এমন কিছু প্রার্থনা করা যা মানুষের কাছে চাওয়া যায়। এরকম প্রার্থনা করলে অবশ্যই নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
- ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে নামাজের মধ্যে কোন খাবার খেলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
- কোনরকম দুঃখ কষ্ট বা বেদনার কারণে নামাজের মধ্যে চিৎকার করলে এমনকি আল্লাহর ভয়ে উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
- নামাজের মধ্যে যদি আপনি অল্প কিংবা বেশি কথা বলেন তাহলে কিন্তু নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
- বিনা কারণে গলা খাগড়ানো বা গলা পরিষ্কার করা। এগুলো করলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
- নামাজের মধ্যে যদি আপনি অট্টহাসি হাসেন তাহলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
- ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে নামাজের কোন একটি ফরজ যদি ছুটে যায় তাহলে আপনার নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
নামাজ না হওয়ার কারণ
আমরা অনেকে আছি যারা নামাজ না হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাই। নামাজ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। হাশরের ময়দানে প্রথম এই নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। যে ব্যক্তি নামাজের হিসাব সঠিকভাবে দিতে পারবে সেই ব্যক্তি তার সকল কার্যক্রমের হিসাব দিতে পারবে। তাই আমাদেরকে নামাজ সঠিকভাবে আদায় করতে হবে। চলুন আমরা এখন নামাজ না হওয়ার কারণগুলো জেনে নিন।
- যদি নামাজ চলাকালীন অবস্থায় কোন রকমের কথা বলা হয় তাহলে সে নামাজ হবে না।
- নামাজের মধ্যে সালামের উত্তর দেওয়া হলে নামাজ হবে না।
- বিনা কারণে কাশি দিলে নামাজ হবে না।
- কেবলামুখী হয়ে নামাজ আদায় না করলে নামাজ হবে না।
- নামাজের মধ্যে কোন কিছু খেলে নামাজ হবে না।
- ইমামের আগেই নামাজের কার্যক্রম শুরু করলে নামাজ হবে না।
- নামাজের মধ্যে যদি অশুদ্ধ কোরআন তেলাওয়াত করা হয় তাহলে সেই নামাজ হবে না।
- নাপাক জায়গায় সিজদা দিলে নামাজ হবে না।
- নামাজের মধ্য শব্দ করে হাসলে নামাজ হবে না।
- নামাজে কোরআন দেখিয়া পড়লে নামাজ হবে না।
নামাজ না পড়ার শাস্তি
বেনামাজি ব্যক্তিদের কে ১৫ টি শাস্তি দেওয়া হবে। এর মধ্যে বেনামাজি ব্যক্তিকে দুনিয়াতে পাঁচ ধরনের শাস্তি দেওয়া হবে। বেনামাজি ব্যক্তিকে মৃত্যুর সময় তিন ধরনের শাস্তি দেয়া হবে। বেনামাজি ব্যক্তিকে কবরে চার ধরনের শাস্তি দেয়া হবে। এবং কবর থেকে উঠানোর পর শাস্তি দেয়া হবে। আর এভাবেই মোট ১৫টি শাস্তি দেয়া হবে বেনামাজি ব্যক্তিদেরকে। আসুন তাহলে এই ১৫ টি শাস্তি সম্পর্কে জানা যাক।
দুনিয়াতে যে শাস্তি দেওয়া হবে
- নামাজ না পড়ার কারণে বেনামাজি ব্যক্তিদের থেকে বরকত ছিনিয়ে নেয়া হবে।
- নেক বান্দাদের দোয়ার মধ্য বেনামাজির কোন ভাবেই কোন হক থাকবে না।
- বেনামাজি ব্যাক্তিদের কোন দোয়া কবুল করা হবে না।
- বেনামাজির চেহারা থেকে নেক কারের নুর দূর করে দেয়া হবে।
- বেনামাজি ব্যক্তিদের নেক কাজের কোন বদলা দেওয়া হয় না।
কবরে যে শাস্তি দেয়া হবে
মহান আল্লাহ বেনামাজি ব্যক্তিদের কে একদমই পছন্দ করেন না। তাই অবশ্যই যারা বেনামাজি রয়েছেন তারা এখন থেকেই নামাজ পড়ার অভ্যাস করুন। বেনামাজি ব্যাক্তিদের জন্য কবর খুবই ভয়াবহ হয়ে যাবে। সেই ব্যক্তির এক পাশের বুকের হাড় অন্যপাশের বুকের হাড়ের সাথে এমনভাবে চাপ দেবে যা সহ্য করার মতো নয়। বেনামাজি ব্যক্তিদের কবরের আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা
বেনামাজি কবরে সাপ থাকবে যা বেনামাজি ব্যক্তিকে কখনো শান্তিতে থাকতে দেবে না। কবরে সেই সাপের চোখ হবে আগুনের মত। নখগুলো হবে লোহার মতো এবং প্রতিটি নখ লম্বা হবে। কবরে সেই সাপের আওয়াজ হবে বজ্রের আওয়াজ এর মত। সেই সাপ বেনামাজি ব্যক্তিকে বলতে থাকবে যে আমি আমার রক্ত তোমার জন্য নিযুক্ত করেছি যাকে নষ্ট করার কারণে সূর্যদোহ পর্যন্ত দংশন করতে থাকে।
মৃত্যুর সময় যে শাস্তি দেয়া হবে
- বেনামাজি ব্যক্তির মৃত্যুর সময় ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করতে হবে।
- নামাজ না পড়ার কারণে অনেক ব্যক্তির মৃত্যু হবে পিপাসিত অবস্থায়। আর সেই ব্যক্তির মনে হবে সমুদ্রের সমপরিমাণ পানি খেলেও তার পিপাসা মিটবে না।
- বেনামাজি ব্যক্তির মৃত্যুর সময় জিলাপি ও অপমানের সঙ্গী হয়।
কবর থেকে তোলার পর যে শাস্তি দেয়া হবে
- যে ব্যক্তি নামাজ আদায় করবে না তার হিসেব খুব ভয়াবহ বা কঠিন হবে।
- নামাজ না পড়ার কারণে বেনামাজি মানুষদের কে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
- যে ব্যক্তি নামাজ আদায় করবে না সেই ব্যক্তি আল্লাহ তালার উপর অসন্তুষ্টি থাকবে।
- নামাজ না পড়ার কারণে চেহারার তিনটি লাইন দেখা থাকবে।
- হে আল্লাহর হক নষ্টকারী।
- হে আল্লাহর গুস্তায়ও পতির ব্যক্তি।
- তুমি দুনিয়াতে যেমন আল্লাহর হক নষ্ট করেছ ঠিক তেমনি আজ আল্লাহর রহমত থেকে তুমি বঞ্চিত হলে।
শাকিল বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url