নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং নিম পাতার ব্যবহার

সাধারণত নিম একটি গাছ। এই নিম গাছের ছাল, পাতা, ও বীজ দিয়ে নানা রকম ওষুধ তৈরি হয়। নিমপাতা আমাদের অনেক উপকার করে থাকে। যেমন, নিমপাতা চোখের রোগ, রক্তাক্ত নাক, কোষ্ঠকাঠিন্যর রোগ, পেট খারাপ হওয়া, ত্বকের সমস্যা, জ্বর, মারি রোগ ,ডায়াবেটিস, ও লিভারের জন্য ব্যবহৃত হয়। নিম পাতা শুধু যে আমাদের উপকার করে তা কিন্তু নয়। এর কিছু অপকারিতা আছে। এখন চলুন নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং নিম পাতার ব্যবহার, সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

নিম গাছের প্রতিটি অংশ পাতা, ছাল, শিকর, ফুল, বীজ, এগুলো কোন না কোন আয়ুর্বেদে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাই বলা যায় যে নিম পাতার অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। এখন আপনারা যারা নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চান। তারা আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

সূচিপত্র: নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং নিম পাতার ব্যবহার

ভূমিকা

নিম হলো একটি ঔষধি গাছ। এ গাছের ডাল, পাতা, রস এগুলো সব কাজে লাগে। নিম গাছটি বহু বর্ষজীবী ও চির হরিত বৃক্ষ। এর জন্য নিম গাছ একটি ঔষধি গাছ হিসেবে মূল্যবান। এ গাছের পাতা থেকে শুরু করে এর ছাল বা বাকল পর্যন্ত কোন কিছুই ফেলে দেওয়া যায় না। কারণ নিম গাছের ছাল, নিম গাছের পাতা, নিম গাছের বীজ, এগুলো ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও নিম গাছের পাতা, মূল, ফুল, এবং ফল এগুলো নানা রকম কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর জন্যই নিম পাতার পুরো পৃথিবী জুড়ে সুনাম রয়েছে।

আরও পড়ুন: থানকুনি পাতা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম

নিম গাছের শিকড় থেকে শুরু করে, ফল পর্যন্ত ওষুধি গুণ সম্পন্ন। যা আদিমকাল থেকে বিভিন্ন রোগের সুরাহা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আর এই নিম গাছ পুরো পৃথিবী জুড়ে পাওয়া যায়। এটি ব্যবহারিক ও অভ্যন্তরীণ দুইভাবেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে। চলুন তাহলে নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং নিম পাতার ব্যবহার, সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া যাক।

নিম পাতার উপকারিতা

নিম একটি ঔষধি সম্পন্ন গাছ। নিম গাছের ডাল, পাতা সব কাজে লাগে। যেমন নিম গাছের কাঠ খুব শক্ত হয়ে থাকে। নিম কাটে উইপোকা বাসা বাঁধতে পারে না ফলে নিম কাঠে কখনো উইপোকা ধরে না। খালি শুধু উইপোকা না নিম গাছে কোন পোকায় বাসা বাঁধতে পারে না। এর জন্য নিম কাঠ দিয়ে নানা রকম আসবাবপত্র তৈরি হয়। আসুন এবার নিমের ১০ টি আশ্চর্য ঔষধি গুণ ও কার্যকারিতা সম্পর্কে জানা যাক।

  • আপনি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে নিয়মিত নিম পাতার সঙ্গে কাঁচা হলুদ ভালো করে বেটে মুখে লাগিয়ে দেখুন, অবশ্যই ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে। আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে, মিশ্রনের নিম পাতার চেয়ে হলুদের পরিমাণ যেন কম হয়। তবে হলুদ ব্যবহার করার পর কয়েক ঘন্টা রোদে এড়িয়ে চলবেন।
  • দাঁতের জন্য নিমের ডাল খুব উপকারী। কারণ নিমের ডাল মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে এবং দাঁতের ফাঁকে জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ রোধ করতে খুব উপকারী।
  • আবার কোন জায়গায় কেটে গেলে বা পুড়ে গেলে ক্ষতস্থানে নিম পাতার রস লাগিয়ে দিবেন দেখবেন এটা ভেষজ ওষুধের মত কাজ করবে।
  • ত্বকের যেকোনো সমস্যা থাকলে নিম পাতা বেটে লাগাতে পারেন, এতে উপকার পাবেন।
  • নিম তেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-ই এবং ফ্যাটি এসিড রয়েছে। যা আমাদের ত্বক এবং চুলের জন্য খুব উপকারী।
  • গায়ের দুর্গন্ধ বা ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে নিম পাতার রস খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান।
  • নিমপাতা রোদে শুকিয়ে ভালো করে গুঁড়ো করে রেখে দিতে পারলে। পরবর্তীতে তা ফেস প্যাক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
  • নিমপাতা ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস বিরোধী। তার জন্য ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের আক্রমণের হাত থেকে ত্বককে সুরক্ষিত করতে নিমপাতা খুব কার্যকরী।
  • ব্রণের সমস্যা থেকে দ্রুত নিস্তার পেতে নিম পাতা বেটে লাগাতে পারেন।
  • এছাড়াও মাথার ত্বকের চুলকানির সমস্যাই নিম পাতার রস খুবই কার্যকরী উপাদান। নিম পাতার রস মাথায় নিয়মিত লাগাতে পারলে, এই চুলকানির সমস্যা অবশ্যই কমে যাবে। আবার নিম পাতার রসের চুলের গোড়া শক্ত করে। এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

নিম পাতার অপকারিতা

নিম পাতার যেমন উপকারিতা রয়েছে। তেমনি এর অনেক অপকারিতা রয়েছে। নিম পাতার অপকারিতা গুলো নিচে আলোচনা করা হলো।

  • লিভারের সমস্যা: কারো যদি লিভারের সমস্যা থাকে তাহলে অনুগ্রহ করে নিম পাতা খাওয়ার আগে ডাক্তারের কাছে পরামর্শ করে নেবেন। তা না হলে ক্ষতি হতে পারে।
  • গর্ভপাত: প্রাণী গবেষণায় নিম পাতার নির্যাস গর্ভাবস্থায় প্রচারিত করতে গিয়ে পাওয়া গেছে। ইঁদুর ও বানর উভয়েরই ক্ষেত্রেই কোন দৃশ্যমান পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই গর্ব অবস্থায় অবসান ঘটাতে পারে। আবার যারা গর্ভধারণের আশা করছেন তাদের জন্য নিম পাতা খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই। এই ক্ষেত্রে আপনারা অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করবেন। 
  • কিডনির ক্ষতি: ভেষজ ওষুধের ক্ষেত্রে বিষাক্ত রেনাল ইনজুরির প্লাবনতা ব্যবহৃত থাকার সম্ভাবনা আছে। তার জন্য অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা খুব দরকারি।
  • অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া: যদিও নিমপাতা অ্যালার্জি ও ফুসকুড়ি নিরাময়ের জন্য প্রচুর ব্যবহার হয়। তবে এর অত্যাধিক ব্যবহার অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।

তবে আমাদের সবার এটা খেয়াল রাখতে হবে যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোন কিছুই ব্যবহার করা উচিত নয়। এছাড়াও নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। ভবিষ্যতে আমরা নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য জানবো।

নিম পাতার ব্যবহার

  • ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হজম সংক্রান্ত সমস্যা, এবং উজ্জ্বল রক্ত চাপের মত সমস্যার সমাধান করতে নিম পাতার ভূমিকা অপরিসীম।
  • রক্তে অতিরিক্ত শর্করার মাত্রা হাস করতে সাহায্য করে থাকে নিমপাতা।
  • গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যা থেকে নিরাময় দিতে পারে এই নিম পাতা।
  • নিমের ফল দিয়ে তৈরি তেল সেবন করলে হাঁপানের মত সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
  • এছাড়াও প্রতিনিয়ত নিমপাতা সেবনের ফলে আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে যায়। সেই কারণে খাবারের তালিকায় প্রতিদিন নিমপাতা রাখা প্রয়োজন।

চর্ম রোগে নিম পাতার ব্যবহার

প্রাচীনকাল থেকেই চর্ম রোগের জন্য ভজন ওষুধ হিসেবে নিমপাতা ব্যবহার হয়ে আসছে। নিম নিমপাতা বেটে বা পেস্ট করে চর্মযুক্ত স্থানে লাগালে আলসার, এবং চিকন পক্স জনিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আবার প্রতিদিন গোসলের পানিতে নিমপাতা সিদ্ধ করা পানি ব্যবহার করলে চর্মরোগ থেকে খুব দ্রুত মুক্তি পাবেন। এছাড়াও পাতা দিয়ে গোসল করার ফলে চর্মরোগ থেকে আরাম পাওয়া যায়। এবং শরীর অনেক ঠান্ডা হয়।

ত্বকের যত্নে নিম পাতার উপকারিতা

আমরা অনেকেই দেখছি যে, বহুদিন ধরে রূপচর্চায় নিমের ব্যবহার হয়ে আসছে। ত্বকের দাগ দূর করতে নিমপাতা খুব ভালো কাজ করে। এছাড়াও এটি ত্বককে মশ্চারাইজার হিসাবে কাজ করে। ব্রণ দূর করতে নিমপাতা খুব ভালো কাজ করে। ব্রণ দূর করতে নিমপাতা বেটে লাগাতে হবে। মাথার ত্বকে অনেকেরই চুলকানি ভাব হয়ে থাকে। এর জন্য নিম পাতার রস মাথায় নিয়মিত লাগাতে হবে। তাহলে এই চুলকানি কমে যাবে। এছাড়াও নিয়মিত নিম পাতার সাথে যদি কাঁচা হলুদ পেস্ট করে লাগান। তাহলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি ও স্কিন টোন ঠিক হয়। এছাড়াও কিন্তু নিম পাতার আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে।

নিম পাতার বৈশিষ্ট্য

আমরা সবাই জানি যে নিমপাতা দেখতে সবুজ রঙের হয়। সাধারণত এর পাতাগুলো অনেক ছোট ছোট হয়। নিম গাছ পরিমাণের চেয়ে অনেক বড় হয়। নিম গাছের ডাল, পাতা, ছাল, ফুল, ফল এগুলো বিভিন্ন ঔষধি কাজে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও এই গাছের কাঠ দিয়ে নানা রকম আসবাবপত্র তৈরি করা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন: ৯ উপায়ে কিভাবে সুন্দর হওয়া যায় রাতারাতি ফর্সা হওয়ার উপায়

নিম পাতার অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন- নিম গাছের ছাল, ম্যালেরিয়া, পেট এবং অন্ত্রের আলসার, চর্মরোগ, ব্যথা, এবং জ্বর নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও নিমপাতা কোষ্ঠকাঠিন্য, চোখের রোগ, পেট খারাপ, খিদে কমে যাওয়া, জ্বর ডায়াবেটিস, মাড়ির সমস্যা, হৃৎপিণ্ড, এবং রক্তনালীর রোগ, ত্বকের আলসার, রক্তাক্ত নাক, এবং লিভারের সমস্যা সমাধানের এই নিম পাতা প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করেছে। আশা করি আপনারা এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এই আলোচনায় আরো জানতে পেরেছেন যে চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার, ত্বকের যত্নে নিম পাতার উপকারিতা, এবং নিম পাতার বৈশিষ্ট্য, এগুলো সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আজকের এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আমাদের এই ওয়েবসাইটে এ ধরনের সুন্দর সুন্দর ব্লক পোস্ট করা হয়। আপনার সুস্থতা কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শাকিল বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url