মিষ্টি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

মিষ্টি খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ হয়তো খুব কমই আছে। মিষ্টি খেতে কে না ভালোবাসে। তবে অনেকেই স্বাস্থ্য সচেতন এর জন্য মিষ্টি খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। তবুও খাবার খাওয়ার শেষে মাঝে মধ্যে একটা মিষ্টি বা মিষ্টি জাতীয় কিছু খান অনেকেই। আপনারা কি জানেন যে খাওয়ার শেষে এ মিষ্টি খাওয়ার অভ্যাস কি শরীরের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নাকি। এই অভ্যাস স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। চলুন তাহলে মিষ্টি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

মিষ্টি হলো চিনি বা গুড়ের রসে ভেজানো ময়দার গোলা কিংবা দুধ, চিনি মিশে তৈরি বিভিন্ন আকৃতির ছানা। অথবা ময়দার টুকরো করা একটা জনপ্রিয় খাবার। সাধারণত বাঙালির খাওয়া দাওয়াই মিষ্টি একটি অতি জনপ্রিয় খাবার। বাঙালির কোন অনুষ্ঠানেই মিষ্টি ছাড়া পূর্ণতা পায় না। এখন মিষ্টি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা যারা জানতে চান। তারা আমার এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

সূচিপত্র: মিষ্টি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

ভূমিকা

মিষ্টি হলো চিনি বা গুড়ের রসে ভেজানো ময়দার গোলা কিংবা দুধ, চিনি মিশে তৈরি বিভিন্ন আকৃতির ছানা। অথবা ময়দার টুকরো করা একটা জনপ্রিয় খাবার। সাধারণত বাঙালির খাওয়া দাওয়াই মিষ্টি একটি অতি জনপ্রিয় খাবার। বাঙালির কোন অনুষ্ঠানেই মিষ্টি ছাড়া পূর্ণতা পায় না। মিষ্টির নাম শুনলে কিন্তু জিভে জল চলে আসে। বাংলাদেশ মিষ্টিকে পণ্য করে গড়ে উঠেছে অগানিতিক নামিদামি অনেক বিক্রয় কেন্দ্র। আগের সেই আদি যুগের লাড্ডু থেকে শুরু করে সন্দেশ, কালোজাম, পেরিয়ে আজ বিভিন্ন মিষ্টির প্রকারভেদ শিল্পের পর্যায়ে চলে গেছে ।

এখন বিভিন্ন রকমের মিষ্টির স্বাদ আকারে এমনকি নামকরণে ভিন্নতা নিয়ে জনপ্রিয়। যেমন ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, নেপাল, মায়ানমার, এই সকল অঞ্চলে মিষ্টির প্রচুর ব্যবহার করা হয়। সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে মিষ্টির ব্যবহার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এ সকল অঞ্চলে যে পরিমাণ মিষ্টি মানুষ ব্যবহার করে এ পরিমাণ মিষ্টি কখনো বিশ্বের অন্য দেশে ব্যবহার করা হয় না। চলুন তাহলে মিষ্টি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা যাক।

মিষ্টি খাওয়ার উপকারিতা

আমরা অনেকেই ধারণা করি যে কি বেশি খেলে ডায়াবেটিসের, হৃদরোগ, এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি হয়। কিন্তু এসব স্বাস্থ সমস্যার জন্য শর্করা যে দায়ী তা হয়তো নাও হতে পারে। ঠিক কিভাবে আমাদের স্বার্থের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এই শর্করা। তা বের করতে গিয়ে জ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন যে, বিশেষ করে শর্করা উচ্চমাত্রার ক্যালোরি সমৃদ্ধ কোন খাদ্যের সাথে খাওয়া না হলে, একদমই ক্ষতিকর নয়। চলুন এর উপকারিতা সম্পর্কে জানা যাক।

আরও পড়ুন: প্রতিদিন ডিম খাওয়ার উপকারিতা ডিম খাওয়ার সঠিক নিয়ম 

  • সাধারণত মিষ্টি তৈরিতে দুধ, ছানা ব্যবহৃত হয়। এর জন্য মিষ্টি আমাদের দাঁত ও হারের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • খাবার খেলে আমাদের মধ্যে ও আনন্দের অনুভূতি তৈরি হয়। সাধারণত এই অনুভূতিগুলো শরীরের সামগ্রিক তার জন্য অত্যন্ত জরুরী।
  • খাদ্য গ্রহণের পরে সেই খাদ্যগুলো হজম করার জন্য আমাদের পাকস্থলীতে এসিড ক্ষরণ শুরু হয়। ভাজাপোড়া বা তেল মসলাযুক্ত খাবার খেলে এসিড ক্ষরণের পরিমাণ বাড়তে থাকে। অতিরক্তে এসিড ক্ষরণের ফলে পরিপাক ক্রিয়া ব্যবহৃত হতে পারে এমনকি পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অসুখ হতে পারে। সাধারণত মিষ্টি জাতীয় খাবার এই এসিড ক্ষরণের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।ফলে পরিপাক ক্রিয়া সুস্থভাবে সম্পূর্ণ হতে পারে হতে পারে।
  • ১০০ গ্রাম রসগোল্লা মিষ্টিতে ১৮৬ ক্যালোরি আছে। যার প্রায় ১৫৩ ক্যালরিই শর্করা হতে পাই। যা তৎক্ষণিকভাবেই শক্তি সরবরাহ করতে শুরু করে।
  • বেশি পরিমাণে তেলে ভাজা জিনিস খাওয়ার পর শরীরের রক্তচাপ অনেকাংশেই কমে যায়। এই অবস্থায় কিন্তু মিষ্টি জাতীয় খাবার রক্তচাপকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে সাহায্য করে থাকে।
  • গবেষণায় দেখা গেছে যে, বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে শর্করা জাতীয় খাবার স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এবং দুরূহ কাজ করার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। 
  • সকালে নাস্তায় মিষ্টি খেলে সারাদিন কম খাদ্য গ্রহণ ও শর্করা ক্ল্যাভিং কমে, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে মিষ্টি দারুন ভূমিকা পালন করে থাকে।

মিষ্টি খাওয়ার অপকারিতা

মিষ্টি খাওয়ার যেমন, উপকারিতা রয়েছে। তেমনি মিষ্টির উপকারিতা ও রয়েছে। মিষ্টির অপকারিতা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো- আপনারা সবাই মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
  • যে সকল মিষ্টি দুধ, ছানা, ছাড়া জুমাতো চিনি গুড়ের তৈরি একটি শর্করা সমৃদ্ধ এবং সম্পূর্ণ ক্যালোরি শর্করা হতে আসে। এগুলো বা এ প্রকারের কোন মিষ্টি স্বাস্থ্যকর নয়।
  • একাধিক গবেষণায় পরিচালনা করে দেখা গেছে যে, কোন একদিনের খাবারের যদি ১৫০ গ্রামের বেশি ফ্যাট। তাহলে তা উচ্চচাপ কেলেস্টরলের মতো সমস্যার ঝুঁকি বাড়তে পারে। 
  • শুধুমাত্র মিষ্টি সুগারের জন্য ঝুঁকি এতো ঝুঁকি তৈরি হয় এটা বলা যায় না। গবেষকরা বলেছেন যে উচ্চ ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবারের সাথে উচ্চ তাপমাত্রায় শর্করা সমৃদ্ধ খাবার খেলে তার স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর হতে পারে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে মিষ্টি খাওয়া কিন্তু কখনোই শরীরের পক্ষে ভালো নয়। অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়ার ফলে শরীরে বাড়তি মেদ জমে যা ভবিষ্যতে নানা রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। মিষ্টি জাতীয় যেকোনো খাবার শরীরের ফ্যাটের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • মিষ্টি তৈরির সময় অতিরিক্ত চিনি যোগ করা হয় যা বিভিন্ন জরিপে এ বাড়তি যোগ করা চিনি সমৃদ্ধ খাবার বা পানীয়র সাথে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের আক্রান্ত হওয়ার সম্পর্ক দেখা গিয়েছে।
  • কিছু জরিপে বলা হয় যারা বেশি বেশি কোমল পানীয় বা ফলের রস খান তাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়। এবং মস্তিষ্কের গড় আয়তন কম।
  • এছাড়াও কিছু কিছু মিষ্টি তৈরিতে কৃত্রিম রং ব্যবহার করা হয়। যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

মিষ্টির পুষ্টি উপাদান সমূহ

সাধারণত মিষ্টি তৈরিতে দুধ, ছানা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ফলে এতে প্রোটিন, ফ্যাট, এরকম বিভিন্ন ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। মিষ্টিতে প্রচুর পরিমাণে চিনি বা চিনির শিরা ব্যবহৃত হয়। এর জন্য মিষ্টির ক্যালরির বেশির ভাগ অংশ আসে শর্করা থেকে।

মিষ্টি খেলে কি ডায়াবেটিস হয়

ডাইবেটিকস থেকে দূরে থাকতে হলে নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। কারণ মিষ্টি খাওয়ার সঙ্গে সরাসরি ডাইবেটিস হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। তবে স্থলতার সঙ্গে আছে, মিষ্টি ডেজার্ট উচ্চ স্বর্গরা যুক্ত খাবার এটি শরীরের ওজন বাড়ায়। কারণ এগুলো উচ্চক্য ক্যালরিযুক্ত খাবার তাই বেশি মিষ্টি না খাওয়া ভালো। আমি আগেও বলেছি ডায়াবেটিস থেকে দূরে থাকতে হলে নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। নিয়মিত হাটুন অথবা শারীরিক পরিশ্রম করুন। পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য খান। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে পরিত্যাগ করুন। চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন, এছাড়াও একটি সুশৃংখল জীবন যাপনের অভ্যস্ত হয়ে উঠুন। তবে অতিরিক্ত মিষ্টি না খাওয়াই স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো।

অতিরিক্ত মিষ্টি খেলে কি হয়

অতিরিক্ত বেশি পরিমাণে মিষ্টি খাবার খেলে যকৃতকে বেশি পরিমাণে পরিশ্রম করতে হয়। এর ফলে লিভারে চাপ পড়ে এবং শরীরে লিপিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফ্যাটি লিভার হতে ডিজিজি হতে পারে বিভিন্ন সমস্যাও দেখা দিতে পারে। আবার বেশি পরিমাণে মিষ্টি খেলে ত্বকে একনি সমস্যা বেড়ে যায়। এর  সঙ্গে কিন্তু বয়সের ছাপ পরে ত্বকের টানটান ভাবও  নষ্ট করে দেয়। মিষ্টি খাওয়ার পর বেশ কিছু ক্ষেত্রে শক্তি থাকে, এবং কিছু ক্ষেত্রে দুর্বলতা অনুভব হয়। যা শরীরের পক্ষে মোটেও ভালো নয়। দীর্ঘ সময় ধরে যদি এমন চললে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। 

    আরও পড়ুন: টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

    গবেষকরা বলেছেন যে বেশি পরিমাণে মিষ্টি খেলে শরীর লিপো প্রোটিন লিপোজ তৈরি করে। যা শরীরের জন্য মোটেও ভালো নয়। অতিরিক্ত পরিমাণে মিষ্টি খেলে ব্লাড প্রেসার বা কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে। এর ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সহ আরো হার্ট অ্যাটাক বা স্টকের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও মিষ্টি জাতীয় খাবার-দাবার ইমিউনিটি বা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নেতিবাচক ভাবে প্রভাব ফেলে। এর কারণে খুব অল্পতেই নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে।

    বাংলাদেশি কয়েকটি ভালো প্রকারের মিষ্টির নাম

    কয়েক প্রকারের মিষ্টির নাম নিচে দেয়া হলো-

    • রসগোল্লা
    • কাঁচাগোল্লা
    • রসমালাই
    •  সন্দেশ
    • মতিচুর লাড্ডু
    • বুড়িদানা
    • মালাইকারি
    • মন্ডা মিঠাই
    • ছানামুখি
    • অমৃতি
    • ল্যাংচা
    • প্রাণহরা
    • কালোজাম
    • চমচম
    • রাজভোগ

    উপসংহার

    প্রিয় পাঠক আশা করি পুরো আর্টিকেলটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। এই পোস্ট থেকে আপনি আশা করি মিষ্টি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এই আলোচনা থেকে আপনি আরো জানতে পেরেছেন যে, মিষ্টির পুষ্টি উপাদান সমূহ, মিষ্টি খেলে কি ডায়াবেটিস হয়, অতিরিক্ত মিষ্টি খেলে কি হয়, এবং বাংলাদেশি কয়েকটি ভালো প্রকারের মিষ্টির নাম, এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আরো অবগত হয়েছেন। আজকের এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আমাদের এই ওয়েবসাইটে এ ধরনের সুন্দর সুন্দর ব্লক পোস্ট করা হয়। আপনার সুস্থতা কামনা করে আজকে এখানেই শেষ করছি। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    শাকিল বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

    comment url