থানকুনি পাতা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা | থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম

আমাদের দেশে খুব পরিচিত একটি ভেষজ উদ্ভিদ হলো থানকুনি পাতা। আমরা কিন্তু অনেকেই আছি যারা থানকুনি পাতা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি। আবার আমরা অনেকেই আছি যারা থানকুনি পাতা কি বা থানকুনি পাতার কি উপকার আছে তা সম্পর্কে জানি না। আর তাই আজকে শুধুমাত্র তাদের জন্যই তৈরি করেছি আমাদের এই পোস্টটি। আজ আমরা আমাদের এই পোস্টে থানকুনি পাতা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা- থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

চলুন তাহলে আর বেশি দেরি না করে থানকুনি পাতা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা- থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। এটা জানার জন্য আপনাকে অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

সূচিপত্র: থানকুনি পাতা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা- থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম

ভূমিকা

আমাদের দেশে খুব পরিচিত একটি ভেষজ উদ্ভিদ হলো থানকুনি পাতা। গ্রাম অঞ্চলে থানকুনি পাতার ব্যবহার আদিকাল থেকেই হয়ে আসছে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে কেউ যদি নিয়মিত থানকুনি পাতা খায় তাহলে মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের পাতা পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অঙ্গের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এই থানকুনি পাতা সাধারণত পুকুরপাড় বা জলাশয়ে হামেশাই দেখা যায়। চিকিৎসকেরা বলেছেন যে এই থানকুনি পাতার এমন ভেষজ গুণ রয়েছে যা নিয়মিত খেতে পারলে পেটের অসুখে কোনদিন ভুগতে হবে না। এছাড়াও এই থানকুনি পাতা শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখে এবং ছোট থেকে খাওয়াতে পারলে বুদ্ধির বিকাশ হয়। চলুন তাহলে থানকুনি পাতা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা- থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম এবং আরো নানারকম পদ্ধতি বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া যাক।

থানকুনি পাতা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা

চিকিৎসকরা গবেষণা করে দেখেছেন যে কেউ যদি নিয়মিত থানকুনি পাতা খায় তাহলে তার মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের পাতা পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অংশের ক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। চলুন তাহলে থানকুনি পাতা খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানা যাক।

আরও পড়ুন: নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং নিম পাতার ব্যবহার 

পেটের রোগের সমস্যায় সাহায্য করে: এই থানকুনি পাতা পেটের বিভিন্ন রোগের সমস্যায় সাহায্য করে থাকে। কিছুটা থানকুনি পাতার সাথে অল্প পরিমাণ আম গাছের ছাল ও একটি আনারসের পাতা ও হলুদের রস মিশিয়ে ভালো করে বেটে নিয়মিত খেতে হবে। এতে করে আপনার পেটের নানা রকম রোগের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও যদি আপনার কৃমির সমস্যা থাকে তাহলে সেটাও ভালো হয়ে যাবে।

কাশি কমাতে সাহায্য করে: আপনার যদি কাশির সমস্যা থাকে তাহলে প্রতিদিন দুই চামচ থানকুনি পাতার রসের সাথে কিছু পরিমাণ চিনি মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে করে আপনার কাশি অতি দ্রুত কমে যাবে। আপনি চাইলে এই পদ্ধতি 7 দিন পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারেন।

হজমে উন্নতি করতে সাহায্য করে: আপনার হজমে সমস্যা থাকলে থানকুনি পাতা খেতে পারেন। হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে থানকুনি পাতার রস খেতে হবে। কারণ এই থানকুনি পাতাতে আছে একাধিক উপকারী গুনাগুন উপাদান, যা হজমে সাহায্য করবে। এছাড়াও থানকুনি পাতা বদ- হজম গ্যাসের সমস্যা এবং কম্বলের মতো সমস্যা দূর করে।

ক্ষতের চিকিৎসায় সাহায্য করে: আপনার যদি কোন জায়গায় কেটে বা পুড়ে যায় তাহলে আপনি থানকুনি পাতা বেটে লাগিয়ে দিতে পারেন। এতে করে আপনার ক্ষত দ্রুত শুকাতে সাহায্য করবে। এছাড়াও থানকুনি পাতা শরীরের আরো অন্যান্য উপকারী উপাদানের জন্য খুবই ভালো কাজ করে থাকে।

থানকুনি পাতা ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে: থানকুনি পাতাতে রয়েছে অ্যামাইনো এসিড, বিটা ক্যারোটিন, এবং ফাইটো কেমিক্যাল এসিড যা ত্বকের ভিতরের সকল পুষ্টির ঘাটতি দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ত্বকের বলিরেখা কমাতে বিশেষ বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে থাকে এই থানকুনি পাতা। আবার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।

আমাশয় দূর করে: থানকুনি পাতা আমাশয় দূর করতে সাহায্য করে থাকে। আপনার যদি আমাশয় হয়ে থাকে তাহলে আপনি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিয়ম করে থানকুনি পাতা খেতে পারেন। এইভাবে যদি আপনি টানা ৭ দিন খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার আমাশয় দূর হয়ে যাবে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে: নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে আপনার ওজন কমবে। আপনাদের মধ্যে কেউ যদি মোটা হয়ে যান তাহলে তাদের জন্য ওজন কমাতে নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার বিকল্প নেই। তাই ওজন কমাতে প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে থানকুনি পাতার রস খান।

শরীর থেকে টক্সিক উপাদান বের করতে সাহায্য করে: এই ক্ষতিকর টক্সিক আমাদের শরীরে রক্তে প্রবেশ করে থাকে। কিন্তু প্রতিদিন সকালে অল্প পরিমাণ থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে আমাদের শরীরের এই রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদান বেরিয়ে যায়।

থানকুনি পাতা চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে: থানকুনি পাতা চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার থানকুনি পাতা খেলে স্কাল্পের ভেতরে পুষ্টি ঘাটতি দূর হয়, এর ফলে চুল পড়া কমে যায়। পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা নিয়ে তা বেটে নিয়ে তারপর তার সঙ্গে পরিমাণ মতো তুলসী পাতা এবং আমলা মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। সবশেষে মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে নিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। সর্বোচ্চ ১০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে করে আপনার চুল পড়া কমে যাবে।

জ্বরের সমস্যায় সাহায্য করে: অনেকেরই জ্বর আসলে সেই জ্বর সহজে কমে না যদি প্রচুর পরিমাণে জ্বর হয় এবং না কমে। তাহলে সেই সময় জ্বর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনি থানকুনি পাতা ব্যবহার করতে পারেন। সকালে খালি পেটে এক চামচ থানকুনি পাতার রসের সাথে এক চামচ শিউলি পাতার রস মিশিয়ে খেতে পারেন। এর ফলে অতি দ্রুত আপনি জ্বর থেকে মুক্তি পাবেন। এছাড়াও আপনার শারীরিক দুর্বলতা থাকলে তা কমে যাবে।

থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম

আপনি কি জানেন যে থানকুনি পাতা শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় খুব উপকারী। জ্বর থেকে শুরু করে চুল পড়া, পেট ব্যথা সহ আরো নানা ধরনের সমস্যা থেকে রক্ষা করে থাকে এই থানকুনি পাতা। কিন্তু এই থানকুনি পাতা আপনি কিভাবে খাবেন তার নিয়ম আমারা আজকে আপনাদেরকে জানাবো। এখন আমরা আপনাদের সাথে থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব। থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম নিম্নরূপ

  • এই থানকুনি পাতাতে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুনাগুন রয়েছে, যা বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের উপায়ে থানকুনি পাতা খাওয়া যায় আর এই থানকুনি পাতা খেতে হলে আপনাকে প্রথমে থানকুনি পাতাগুলো পরিষ্কার করে ধুয়ে এবং সুন্দরভাবে বেটে নিয়ে খেতে হবে।
  • আপনি চাইলে থানকুনি পাতা বেটে বড়া বা পিয়াজু বানিয়ে খেতে পারেন।
  • থানকুনি পাতার রস বের করে খেতে পারেন।
  • আপনি চাইলে থানকুনি পাতা ভর্তা করে ভাতের সঙ্গে খেতে পারেন।
  • থানকুনি পাতা ছোট ছোট করে কেটে পানির সঙ্গে খেতে পারেন।
  • এছাড়াও আপনি থানকুনি পাতা পরিষ্কার করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে গুড়া করে খেতে পারবেন।

থানকুনি পাতার চেনার উপায়

থানকুনি পাতা আমরা অনেকেই দেখেছি আবার অনেকেই দেখিনি কিন্তু তার নাম না জানার কারণে ঠিক বুঝে উঠতে পারি না কোনটা থানকুনি পাতা। তাই আজকে আমরা আপনাদের সুবিধার্থে থানকুনি পাতা চেনার উপায় নিয়ে আলোচনা করব। আসুন তাহলে থানকুনি পাতা চেনার উপায় গুলো কি কি তা সম্পর্কে জেনে নেই।

  • সাধারণত থানকুনি পাতার স্বাদ তেতো।
  • সাধারণত এই থানকুনি পাতা স্যাতসেতে জায়গা ও পুকুর পাড়ে বেশি জন্মায়।
  • থানকুনি পাতা দেখতে গোল গোল খাজ কাটার মত।
  • এছাড়াও থানকুনি পাতা একটা পয়সার থেকে কিছুটা বড় হয়ে থাকে।

থানকুনি পাতার অপকারিতা

সবকিছুর যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি অপকারিতা রয়েছে আমরা ইতিমধ্য থানকুনি পাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদেরকে জানিয়েছি। আজ আমরা থানকুনি পাতার অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদেরকে জানাবো। নিচে থানকুনি পাতার অপকারিতা সম্পর্কে  আলোচনা করা হলো।

  • প্রয়োজনের থেকে বেশি কোন খাবারই খাওয়া উচিত নয়। এতে করে বিপরীত হতে পারে থানকুনি পাতাও তার বিপরীত নয়। থানকুনি পাতা প্রয়োজনের থেকে বেশি খেলে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • থানকুনি পাতা থেকে বিভিন্ন ধরনের এলার্জি দেখা দিতে পারে আবার খোঁজ পাচড়ার সমস্যা হতে পারে।
  • যাদের লিভারের সমস্যা আছে তাদের কোনভাবেই খানকুনি পাতা খাওয়া যাবে না। এতে করে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে।
  • অপারেশনের রোগীদের থানকুনি পাতা একদমই খাওয়া যাবে না।
  • এছাড়াও থানকুনি পাতা প্রয়োজনের থেকে বেশি খেলে মাথা ঘোরা, পেট ব্যথাসহ আরো নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

থানকুনি পাতা কোথায় পাওয়া যায়

থানকুনি পাতা হলো একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এই থানকুনি পাতা এক ধরনের ওষুধি গাছ এই থানকুনি পাতা প্রায় সকল ধরনের সমস্যা সমাধান করে থাকে। থানকুনি গাছ মূলত স্যাঁতস্যাতে পরিবেশে বেশি জন্মায়। সাধারণত এই গাছ গ্রামের বাড়ির আশেপাশে, জলাশয়ে, রাস্তায়, ক্ষেতের আইলে, পুকুর পাড়ে বেশি জন্মে থাকে। তবে বর্তমানে শহরের বাজারে এই গাছ কিনতে পাওয়া যায়।

থানকুনি পাতা চাষ পদ্ধতি

থানকুনি পাতা সাধারণত আমাদের সকলের কাছে পরিচিত একটি ঔষধি সম্পন্ন গাছ। গ্রামের সকল জায়গাতে এই থানকুনি গাছ পাওয়া যায়। আপনি চাইলে নিজের বাড়িতে এই থানকুনি গাছ চাষ করতে পারেন। আজকে আমরা থানকুনি পাতা চাষ পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

থানকুনি চাষ প্রায় সব ধরনের মাটিতেই করা যায়। কিন্তু বেলে দোআঁশ মাটি ও দোআঁশ মাটি থানকুনি চাষের জন্য বেশি উপযোগী। ছোট অথবা মাঝারি সাইজের যেকোনো ধরনের পাত্র বা টবে এই থানকুনি পাতা চাষ করা যায়। আপনি চাইলে আপনার বাসার ছাদে কিংবা উঠানে এই থানকুনি পাতা চাষ করতে পারেন। সাধারণত থানকুনি পাতা চাষের জন্য নির্দিষ্ট কোন সময়ের প্রয়োজন হয় না। এটি যে কোন সময় অথবা সারা বছরই চাষ করতে পারেন। থানকুনি সাধারণত দুই ভাবে বংশবিস্তার করে একটি হলো বীজের মাধ্যমে আরেকটি হলো অঙ্গজ জনন এর মাধ্যমে।

আরও পড়ুন: তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা- এবং তেঁতুল খাওয়ার নিয়ম 

থানকুনি গাছের শিকড় সাধারণত প্রতিটি গিট থেকে বের হয়। থানকুনির শিকড়সহ লতা যে কোন টবে বা পাত্রে স্থাপন করালেই আপনি দেখবেন সেখান থেকে গাছ তৈরি হয়েছে। এই থানকুনি গাছ আদ্র মাটি পছন্দ করে তাই আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে গাছের গোড়ায় যেন পানি না জমে। থানকুনি গাছকে সব সময় সূর্যের আলো সঠিক নিয়মে দিতে হবে। যেন বাতাসের সংস্পর্শে আসে সেদিকে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়াও থানকুনি গাছে নিয়মিত জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছ বেশি বড় হয়ে গেলে সাইজ করে দিতে হবে। গাছের আশেপাশে আগাছা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। শুকনা ও মরা পাতা বেছে বেছে কেটে ফেলে দিতে হবে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আমাদের এই পোস্টটিতে থানকুনি পাতা খাওয়ার উপকারিতা- থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম, থানকুনি পাতা চেনার উপায়, খানকুনি পাতার অপকারিতা, থানকুনি পাতা কোথায় পাওয়া যায়, থানকুনি পাতা চাষ পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আমাদের এই পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে এবং আপনারা উপকৃত হবেন। এ ধরনের আরও নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন, ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শাকিল বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url