প্রতিদিন ডিম খাওয়ার উপকারিতা- ডিম খাওয়ার সঠিক নিয়ম

ডিম আমাদের খাদ্য তালিকায় থাকা অন্যতম একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাদ্য। এর উচ্চ পুষ্টিগুণের জন্য একে সুপারফুড বলে অব্যাহত করা হয়। তাই ডিমের উপকারিতা বিবেচনা করে আপনি নির্দ্বিধায় প্রতিদিন একটি ডিম গ্রহণ করতে পারেন। প্রতিদিন ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও ডিম খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে আজকে আপনাদেরকে বিস্তারিত জানানো হবে। আপনারা যারা আমাদের এই আর্টিকেল পড়ছেন। তারা নিশ্চয়ই প্রতিদিন ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও ডিম খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে চেয়ে গুগলে সার্চ করে আমাদের এই আর্টিকেল ওপেন করেছেন। আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে প্রতিদিন ডিম খাওয়ার উপকারিতা এবং ডিম খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

তাহলে চলুন বেশি দেরি না করে প্রতিদিন ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও ডিম খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। এটা জানার জন্য আপনাকে অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

সূচিপত্র: প্রতিদিন ডিম খাওয়ার উপকারিতা- ডিম খাওয়ার সঠিক নিয়ম

ভূমিকা

ডিম একটি অতি পরিচিত পুষ্টিকর খাবার। আমাদের নিত্য দিনের খাদ্য তালিকায় থাকা অন্যতম একটি সুপারফুড হচ্ছে ডিম। আর এই ডিম খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে, যা আমরা প্রতিনিয়ত খেয়ে থাকি। তবে সঠিকভাবে কেউ ডিম খায় না। যদি নিয়ম মেনে ডিম খাওয়া হয়, তাহলে তার অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। এছাড়াও এটি নানা ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের যোগান দিয়ে থাকে। মোটামুটি আপনার দেহের প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদানের যোগদানদাতা এই ডিম। আসুন তাহলে বেশি দেরি না করে প্রতিদিন ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও ডিম খাওয়ার সঠিক নিয়ম এবং ডিম খাওয়ার নানারকম বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া যাক।

প্রতিদিন ডিম খাওয়ার উপকারিতা

প্রতিদিন যদি আমরা ডিম খাই তাহলে এর স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে অনেক। এমন কিছু উপকারিতা সম্পর্কে চলুন জেনে নেওয়া যাবে।

আরও পড়ুন: মিষ্টি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

  • দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি: এই ডিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, রয়েছে। যা চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে কার্যকরী।
  • নখের যত্নে: তরুণীদের একটি অংশ নখ। এই নখ নিয়ে তারা অনেক বেশি সচেতন। নখের যত্নে ডিম কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। কারণ ডিমে রয়েছে সালফার। তাই নখের যত্নে ও নখ ভেঙে যাওয়া রোধে ডিমের ভূমিকা অপরিসীম। এছাড়াও ডিম নখ সাদা ও সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।
  • হাড় ও দাঁত মজবুতে: ডিমে থাকা সালফার হাড় ও দাঁত মজবুতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। তার জন্য হাড় ও দাঁত মজবুত রাখতে প্রতিদিন ডিম খান।
  • প্রোটিনের ঘাটতি: এই ডিমে রয়েছে অ্যামিনো এসিড। যা প্রোটিনের মূল উৎস। তার জন্য প্রোটিনের ঘাটতি মেটাতে প্রতিদিন ডিম খান।
  • পেশী মজবুত: সারাদিনে কাজ করে এসে অনেকেই পেশী ব্যথাই ভোগেন। এক্ষেত্রে ডিম খুবই উপকারী। কারণ ডিমে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি, রয়েছে। যা পেশী মজবুত করতে সাহায্য করে।
  • শক্তি বাড়ে: শরীরে দ্রুত শক্তি পেতে ডিম অনেক উপকারী। এতে রয়েছে ভিটামিন বি। যা শরীরে বাড়তি শক্তি যোগায়। প্রতিদিন সকালের নাস্তায় একটি করে সেদ্ধ ডিম খান। এটি আপনাকে ক্লান্তহীন দিনে সাহায্য করে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: আপনাদের মধ্যে যারা অনেকেই ঘনঘন সর্দি কাশি বা জ্বলে ভুগছেন। তারা ডিম খেতে পারেন। কারণ ডিমে রয়েছে জিংক। যা আপনার দেহের ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।

ডিম খাওয়ার সঠিক নিয়ম

সাধারণত ডিম যে কোন প্রকারে খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু গবেষকরা জানিয়েছেন যে, ডিম ভাজা বা কাঁচা ডিম খাওয়ার থেকে সিদ্ধ করে খাওয়া সব থেকে ভালো। যদি দ্রুত ওজন কমাতে চান। তাহলে আপনাকে সিদ্ধ ডিম খেতে হবে। কারণ সিদ্ধ ডিমে ক্যালরির পরিমাণ সীমিত পরিমাণে উপস্থিত। সিদ্ধ ডিমে উপস্থিত আছে, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, প্রোটিন, অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট নামক উপাদান। যা আপনার মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

ডিম খাওয়ার অপকারিতা

প্রতিটি খাবারের যেমন ভালো দিক রয়েছে। তেমনি প্রতিটি খাবারের খারাপ দিকও রয়েছে। ডিমের ক্ষেত্রেও ডিমের উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। অধিক মাত্রায় ডিম খেলে আপনার ক্ষতি হতে পারে। অতিরিক্ত ডিম খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। আবার ডিম বেশি খেলে শরীরের কোলস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও ডিমের কুসুম কিন্তু একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খুবই ক্ষতিকর। তবে তুলনা মূলক ভাবে গবেষণা করে দেখা গেছে যে, মূলত ডিমের তেমন কোন অপকারিতা নেই। আমরা যদি নিয়ম মেনে ডিম খাই তাহলে আমাদের শরীরের অপকারের চেয়ে, উপকারী বেশি পাওয়া যাবে, এই ডিম থেকে।

প্রতিদিন দুইটা করে ডিম খেলে কি হয়

প্রতিদিন দুইটা করে ডিম খেলে আমাদের অনেক উপকার হয়। ডিমে থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, বায়োটিন, থিয়ামিন, এবং আরো অনেক উপকারী উপাদান আছে। যা আমাদের শরীরের অনেক উপকার করে থাকে। যেমন-

  • চুল, ত্বক এবং নখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে
  • নখ ভেঙে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে
  • তাকে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে দেয় না

রাতে ডিম খেলে কি হয়

আপনি যদি প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে একটি সিদ্ধ ডিম খেয়ে ঘুমান। তাহলে আপনার শরীরের  পেশী গঠনে সাহায্য করবে। আমাদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে কোলস্টেরল দরকার আছে। তাই ডিমে রয়েছে এ ধরনের ভালো কোলস্টেরল, আর এটি দেহের ক্ষতিকর কোলস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে থাকে।

দিনে কয়টা ডিম খাওয়া উচিত

একজন সুস্থ সবল ব্যক্তির সাধারণত দিনে ৩ থেকে ৪ টি ডিম খাওয়া উচিত। কারণ মোটামুটি একটি ডিমে ৬ গ্রামের মতো প্রোটিন পাওয়া যায়। তাই সুস্থ ব্যক্তিরা চাইলে দিনে ৩ থেকে ৪ টি ডিমের সাদা অংশ খেতে পারেন। আর এতে কোন ধরনের অসুবিধা হবে না।

বেশি ডিম খেলে কি হয়

আমরা অনেকেই কমবেশি ডিম খেয়ে থাকি। কিন্তু বেশি ডিম খেলে কিছু লোকের পেটে গ্যাস বা পেট ফুলে যেতে পারে। আসলে ডিম অত্যাধিক খেলে পাচনতন্ত্রে ভারী হতে থাকে। যা পেট ব্যথার বাড়িয়ে দেয়। দিনে পরিমাণ মতো ডিম না খেলে বমি বমি ভাব, গ্যাস, অতিরিক্ত চর্বি, কোলস্টেরল ছাড়াও আরো অন্যান্য অনেক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই বেশি বেশি ডিম খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনুভব করার পরিবর্তে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিম খাওয়া উচিত।

হাঁসের ডিম খেলে কি হয়

হাঁসের ডিম আমাদের অনেক ধরনের রোগ থেকে রক্ষা করে থাকে। হাঁসের ডিম হলো শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর একটি উপাদান। হাঁসের ডিমে থাকা ভিটামিন বি১২, দেহের হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও হাঁসের ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ। যা দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় এবং রক্ত ও ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা সেলেনিয়াম আমাদের দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। হাঁসের ডিম রিবোফ্রাভিন সমৃদ্ধ, যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট।

কাঁচা ডিম খেলে কি হয়

কাঁচা ডিম কিন্তু ঠিকমতো রান্না না করে খেলে শরীর অসুস্থ হতে পারে। কারণ ডিম সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া বহন করতে পারে। যা খাদ্যজনিত অসুস্থতার একটি কারণ। সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, যাকে সালমোনেলোসিস বলা হয়ে থাকে। এর কারনে ডায়রিয়া, বমি, পেট ব্যথা, এবং জ্বর হতে পারে।

ডিমে কি ধরনের ভিটামিন থাকে

  • সাধারণত একটি ডিমে এলার্জি থাকে ১৪৩ ক্যালোরির মত
  • কার্বোহাইড্রেট থাকে ০.৭২ গ্রাম
  • প্রোটিন থাকে ১২.৫৬ গ্রাম গ্রাম
  • পটাশিয়াম থাকে ১০৩৮ মিলিগ্রাম
  •  ফ্যাট থাকে ৯.৫১ গ্রাম
  • ফসফরাস থাকে ১৫৮ মিলিগ্রাম
  • জিস্ক থাকে ১.২৯ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন এ, ডি, ই, বি ১২, কোলিন, আয়রন, কোলস্টেরল ইত্যাদি।

সপ্তাহে কয়টা ডিম খাওয়া ভালো

গবেষকদের পরামর্শ অনুযায়ী একজন সুস্থ সবল মানুষ প্রতি সপ্তাহে ৭ টি করে ডিম খেতে পারে। এই ডিম খাওয়ার ফলে কোন ক্ষতি হয় না। আসলে ডিম একটি পুষ্টিকর খাবার এগুলি তুলনামূলকভাবে কম ক্যালোরি এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও প্রোটিন, ভিটামিন, এবং খনিজ সমৃদ্ধ। তার জন্য একজন সুস্থ সবল মানুষের প্রতি সপ্তাহে ৭ টি করে ডিম খাওয়া ভালো। তাতে কোন সমস্যা নেই।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক আশা করি পুরো আর্টিকেলটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন। এই পোস্ট থেকে আপনি আশা করি, প্রতিদিন ডিম খাওয়ার উপকারিতা এবং ডিম খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এই আলোচনা থেকে আরও জানতে পেরেছেন ডিম খাওয়ার অপকারিতা, প্রতিদিন দুইটা করে ডিম খেলে কি হয়, রাতে ডিম খেলে কি হয়, দিনে কয়টা ডিম খাওয়া উচিত, বেশি ডিম খেলে কি হয়, হাঁসের ডিম খেলে কি হয়, কাঁচা ডিম খেলে কি হয়, ডিমে কি ধরনের ভিটামিন থাকে, সপ্তাহে কয়টা ডিম খাওয়া ভালো, ইত্যাদি এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আমাদের এই ওয়েবসাইটে এ ধরনের সুন্দর সুন্দর ব্লক পোস্ট করা হয়। আজকের এই আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে, তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। আপনার সুস্থতা কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শাকিল বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url