ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার- ডেঙ্গু রোগ কিভাবে ছড়ায়
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে মারাত্মক মানব রোগ হচ্ছে এই ডেঙ্গু রোগ। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগ দেখা দেয়। চলতি বছর পেছনের সব রেকর্ড ভেঙে প্রকট আকার ধারণ করেছে, এই মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগ। ডেঙ্গু প্রাথমিক অবস্থা নির্ণয় করা না গেলে। মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে, এমনকি হতে পারে মৃত্যু পর্যন্ত। তাই সব সময় আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে। এখন চলুন ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর রোগ দেখা দিয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে মারাত্মক মানব রোগে পরিণত হয়েছে এই ডেঙ্গু রোগ। আপনারা যারা ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। তারা আমার এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
সূচিপত্র: ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার- সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
- ভূমিকা
- ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
- ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ
- ডেঙ্গু কি
- ডেঙ্গু রোগের জীবাণুর নাম কি
- ডেঙ্গু টেস্ট কি কি
- ডেঙ্গু রোগের উপসর্গ
-
ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা
- উপসংহার
ভূমিকা
আপনারা হয়তো ইতিমধ্যে জেনে গেছেন যে, বর্তমান সময়ে সবচেয়ে মারাত্মক মানব রোগে পরিণত হয়েছে এই ডেঙ্গু রোগ। এই ডেঙ্গু রোগ প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা না হলে, মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। সাধারণত এই ডেঙ্গু রোগ জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রকট থাকে। তবে এই বছর সময় আসার আগে থেকেই দেশে বাড়ছে এসিড মশাবাহিত এই ডেঙ্গু রোগ। এবং অসংখ্য মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দিন দিন বেড়েই চলেছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এখন চলুন কিভাবে এর প্রতিকার করবেন তা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
ডেঙ্গু জ্বর একটি মশা বাহিত ভাইরাস সংক্রমণ রোগ। সাধারণত এসিড মশার কামড়ে মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই রোগে তখনই মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে, যখন কেউ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়। যখন মশা সংক্রমিত কোন ব্যক্তিকে কামড়ায় তারপর ভাইরাস বহন করার সময়, একজন অ -সংক্রমিত ব্যক্তিকে কামড় দেয়। অন্যদিকে আবার দিন দিন বেড়ে চলেছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।
আরও পড়ুন: হস্ত মৈথুনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার উপায়
রবিবার ৯ জুলাই, বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার থেকে কন্ট্রোল রুমের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে যে, সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৬ জন। এটি এই বছর একদিনে সর্বশেষ মৃত্যুর রেকর্ড। এর আগেও গত ,মঙ্গলবার ৪ জুলাই, সর্বোচ্চ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে চলিত বছর সারা দেশে ডেঙ্গুতে মোট ৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ
- সাধারণত ডেঙ্গুর লক্ষণ হচ্ছে জ্বর ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০৩ ডিগ্রি তাপমাত্রায় জ্বর হতে পারে। এই জ্বর একটানা থাকতে পারে। আবার জ্বর ছেড়ে দেওয়ার পর আবারও জ্বর আসতে পারে।
- ডেঙ্গুর অন্যতম একটি লক্ষণ হচ্ছে শরীরে ব্যথা। এর সঙ্গে মাথা ব্যথা চোখের পেছনে ব্যথাও হতে পারে। তার সঙ্গে চামড়ায় লালচে দাগ বা র্যাশ থাকতে পারে।
- মনে হতে পারে শরীর ঠান্ডা হচ্ছে। ক্ষুধা কমে যাওয়া। আবার শরীর ম্যাজম্যাজ করার লক্ষণও দেখা যেতে পারে।
- সিভিয়ার ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে তীব্র পেট ব্যথা হতে পারে। ও পেট ফুলে যেতে পারে। রক্তবমি, মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ, ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ, শ্বাসকার্য কঠিন, বা তীব্র হওয়া। শরীর ঠান্ডা অনুভব ও ঘাম হওয়া। এবং ঘুম ঘুম ভাব ও চেতনা হারানো।
- ডেঙ্গুর শক সিনড্রেন থেকে মানবদেহে পানি শূন্যতা তৈরি হতে থাকে। এবং সঙ্গে সঙ্গে পালস রেট অনেকটা বেড়ে যায়। এবং রক্তচাপ খুব কমে যায়, শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়, শ্বাস-প্রশ্বাস খুব দ্রুত চলে, রোগী অস্থির হতে থাকে। তখন সময় নষ্ট না করে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করানো উচিত।
ডেঙ্গু রোগ কিভাবে ছড়ায়
বিশেষজ্ঞদের গবেষণা অনুযায়ী জানা গেছে যে, ডেঙ্গু রোগ ছড়ায় এসিড মশার কামড়ে। আপনারা হয়তো জানেন যে, বিভিন্ন জাতের মশা আছে। এর মধ্য একটি জাত হচ্ছে এডিস মশা। এই এডিস মশা যদি মানুষের দেহে একবার কামড়ে দেয়। তাহলে এর মাধ্যমে ডেঙ্গু জ্বর বা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়। এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তিকে যদি ওই মশা কামড়ায়। তাহলে ওই মশাটি যদি না কামড়ানো ব্যক্তিকে কামড়ায় তাহলে সেই ব্যক্তিও ওই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে যাবে। আর এই ভাবেই ডেঙ্গু রোগ একজনের দেহ থেকে অন্য জনের দেহে বিস্তার করে থাকে।
তাই অবশ্যই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগের থেকে আমাদের সবাইকে দূরে থাকতে হবে। এবং সেই ব্যক্তিকে খুব দ্রুতই চিকিৎসা গ্রহণ করতে বলবেন। এখন এ দেশের সরকার প্রতিটি গ্রাম অঞ্চলে ফ্রি চিকিৎসা কেন্দ্র তৈরি করেছে। ওখানে আপনি এ ধরনের সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য ফ্রি চিকিৎসা নিতে পারবেন।অথবা ফ্রি ওষুধ ও রোগ নির্ণয় করা হবে। তাই আপনার পার্শ্ববর্তী যে কোন চিকিৎসালয় বা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ গিয়ে আপনার যেকোনো ধরনের নানা সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।
ডেঙ্গু কি
সাধারণত ডেঙ্গু একটি ভাইরাস জনিত রোগ। স্ত্রী এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু হয়ে থাকে। এই মশার কামড়ের মাধ্যমে ডেঙ্গু জীবাণু মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগ ছোঁয়াচে রোগ না, হলেও যদি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কাউকে মশা কামড়ানোর ফলে সে মশা অন্য কাউকে কামড়ায়। তাহলে তার মধ্য রোগটি সংক্রমিত হবে। এছাড়াও সংক্রমিত মশার সংস্পর্শে আসা সব বয়সের মানুষই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে। গ্রীষ্মমগুলিও অঞ্চলে ডেঙ্গু রোগ বেশি দেখা দেয়। সারাবিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার মানুষ মারা যায়, এই ডেঙ্গু জ্বরের কারণে।
ডেঙ্গু রোগের জীবাণুর নাম কি
সাধারণত ডেঙ্গু রোগের জীবাণুর নাম হলো- ফ্ল্যাভিভাইরাস এই ফ্ল্যাভিভাইরাস মশাবাহিত এক সূত্রক RNA ভাইরাস। এই রোগটি ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী। এবং এই ভাইরাসের পাঁচটি সেরাটাইপ পাওয়া গিয়েছে। এই রোগ যে, কোন পূর্ণরূপ ধারণা করতে সক্ষম। তাই আমাদের এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য সবাইকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। কারো যদি এ ধরনের রোগ দেখা দেয়, তাহলে তার থেকে দূরে থাকা ভালো। এবং তাকে ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে বলা উচিত।
ডেঙ্গু টেস্ট কি কি
সাধারণত ডেঙ্গু টেস্ট করার অত বেশি প্রয়োজন হয় না, BBC এবং প্লান্টিলেট কাউন্ট করলে যথেষ্ট। কিন্তু জ্বরের একদম শুরুতে রক্ত পরীক্ষা করলে রিপোর্ট স্বাভাবিক থাকবে। এবং তা রোগ নির্ণয়ে সৃষ্টি করতে পারে রোগী। এমনকি ডাক্তারও মনে করতে পারেন যে, রিপোর্ট ভালই আছে। তবে আর কোন পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল, কারণ, প্লান্টিলেট কাউন্ট ৪ থেকে ৫ দিন পর কমতে শুরু করে।
তাই জ্বর শুরুর ৪ বা ৫ দিন পর রক্ত পরীক্ষা করা উচিত। আবার অনেকেই দিনে দুই তিনবার এমনকি একই সঙ্গে একাধিক ল্যাবরেটরি থেকে প্লান্টিলেট কাউন্ট করে, যার কোন প্রয়োজন নেই। এক থেকে দুই দিনে জ্বরে ডেঙ্গু ANAS-1 এবং চার থেকে ছয় দিন পর এন্টি ডেঙ্গু এন্টিবডি করা যেতে পারে। এসব পরীক্ষাগুলো রোগ শনাক্তকরণে সহযোগিতা করলেও চিকিৎসায় কোন ভূমিকা নেই।
ডেঙ্গু রোগের উপসর্গ
ডেঙ্গু রোগের জীবাণুর নাম অনেকগুলো আছে। কিন্তু ডেঙ্গু হালকা থেকে গুরুতরাও পর্যন্ত স্তর উপসর্গ। স্থাপন করে সবচেয়ে সাধারণ লক্ষ্য গুলির মধ্যে রয়েছে যেমন-
উচ্চ মাত্রার জ্বর:
সাধারণভাবে ডেঙ্গু জ্বর ক্লান্তি এবং দূরত্বের কারণ হতে পার। যার ফলে সাধারণ ক্লান্তি এবং শক্তির অভাব দেখা দেয়।
গুরুতর মাথাব্যথা:
ডেঙ্গু জ্বরের কারণে তীব্র মাথাব্যথা হতে পারে। প্রায় চোখের পেছনে তীব্র ব্যথা হয়। চোখের নাড়াচড়ার সাথে মাথা ব্যথা আরো বেশি পরিমাণে খারাপ হতে পারে।
শরীরের ব্যথা এবং জয়েন্টে ব্যথা:
ডেঙ্গু জ্বর হলে জয়েন্টে ব্যাথা হতে পারে। সাধারণত নিচের পিঠ ও পা এবং জয়েন্ট গুলিকে প্রভাবিত করে। ব্যথা দুর্বল হতে পারে, এবং প্রায় গভীর ব্যথা হিসাবে বর্ণনা করা হয়।
আবার কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গু একটি গুরুতর আকারে অগ্রসর হতে পারে। এবং ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার DHF বা ডেঙ্গু শক সিড্রোম DSS নামে পরিচিত। যা অতিরিক্ত উপসর্গ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন গুরুতর পেটে ব্যথা, অবিরাম বমি, শ্বাস নিতে অসুবিধা, এবং মাড়ি থেকে রক্তপাত। এ গুরুতর রোগের অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন।
ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা
সাধারণত ডেঙ্গু রোগ হলে ডাক্তাররা প্যারাসিটামল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু অনেকেই না জেনে শরীরের বিভিন্ন অংশের তীব্র ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথা নাশক নানা ধরনের ওষুধ খেয়ে থাকেন।এক্ষেত্রে বিপদ ঘটতে পারে বলে সতর্ক করেছেন চিকিৎসকরা। কারণ ব্যথা নাশক ওষুধ শরীরের রক্তক্ষরণ ঘটাতে পারে যা ডেকে আনতে পারে মৃত্যু।
আরও পড়ুন: জ্বরে আনারসের উপকারিতা ও আনারস খাওয়ার সঠিক নিয়ম
- ডেঙ্গু হলে চিকিৎসকরা বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যেমন ভাতের মার, ডাবের পানি, ফলের রস, স্যালাইন, লেবুর রস ইত্যাদি। তরল খাবার 90% ডেঙ্গুর তীব্রতা কমায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যেমন ডাল, ডিম, মুরগির মাংস, ছোট মাছের ঝোল, এগুলো বেশি করে রাখতে হবে খাদ্যের তালিকায়।
- ডেঙ্গু রোগের প্লান্টিলেট কমে যায়। তাই প্লান্টিলেট বাড়ে এমন খাবার খেতে হবে। যেমন কাঠবাদাম, দই, গ্রিন টি, ক্যাপসিকাম, পালং শাক, আদা. রসুন ও হলুদ।
- রক্তের প্লান্টিলেট বাড়াতে নিম পাতার রস ভালো কাজ করে। এটি রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি করে নিমপাতার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর গুণও আছে।
- পেয়ারার শরবত ও পান করা যেতে পারে। পেয়ারার রসে ভিটামিন সি থাকে। এই পানিয়টি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে ডেঙ্গু সংক্রমণ উপশম করে।
শাকিল বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url